ব্যাকলিংক কিভাবে তৈরি করবেন

ব্যাকলিংক কি? কিভাবে ব্যাকলিংক তৈরি করতে হয়?

যারা এসইও (SEO) নিয়ে কাজ করে বা যাদের আগে থেকেই একটি ব্লগ বা ওয়েবসাইট আছে তাদের কাছে ব্যাকলিংক কথাটি পরিচিত।

কিন্তু যারা নতুন ব্লগ সাইট শুরু করেছে বিভিন্ন রিসার্চের মাধ্যমে পাওয়া ব্যাকলিংক কথাটির অর্থ তাদের কাছে একটু কমপ্লেক্স বা কঠিন।

আপনি এই আর্টিকেলটি পড়ছেন এর মানে অবশ্যই আপনি কোনো ভাবে জানতে পেরেছেন যে SEO বা সাইটের ভিসিটর্স বাড়ানোর ক্ষেত্রে ব্যাকলিংক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

তো আজকে আমরা এই আর্টিকেলের মধ্যে জানবো যে ব্যাকলিংক কি? এবং কিভাবে ব্যাকলিংক তৈরী বা লিংক বিল্ডিং করবেন।

ব্যাকলিংক কি?

একটি ব্যাকলিংক বলতে যখন কোনও ওয়েবসাইটের সাথে আরেকটি ওয়েবসাইটের লিংক তৈরী হয় তাকে বোঝানো হয়।

বা বলা যায় ব্যাকলিংক হল একটি এক্সটার্নাল লিংক যা আপনি অন্য ওয়েবসাইট থেকে আপনার সাইটে পেয়ে থাকেন।

আরো যদি সহজ ভাবে বলি তাহলে যখন কোনো সাইট আপনার সাইটের লিংটি তার সাইটে ব্যবহার করে এর ফলে যে লিংকটি তৈরি হয়।

যেভাবে ব্যাকলিংক কাজ করে

ওপরের ছবিতে দুটি সাইট দেখানো হয়েছে যেখানে বাম দিকের A সাইট হল অন্য একটি সাইট যে আপনার সাইটের লিংক বা URLব্যবহার করছে।

আর ডানদিকের B সাইটটি হল আপনার সাইট। এবং এই দুটি সাইটের মধ্যে যে লিংকটি তৈরী হয়েছে সেটিই হল ব্যাকলিংক।

অবশ্যই মনে রাখবেন বাম দিকের সাইটের কাছে আপনার সাইটের URLটি হল এক্সটার্নাল লিংক আর আপনার সাইটের জন্য ব্যাকলিংক।

ব্যাকলিংকের গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা কি?

এখন আপনার মনে হয়তো একটি প্রশ্ন আসতেই পারে যে আমি ব্যাকলিংক তৈরি কেন করবো বা এর গুরুত্ব কি?

তাহলে আপনাকে সবার প্রথমেই বলে রাখি যে কোনো ওয়েবসাইট বা ব্লগ সাইটের অফ পেজ এসএও (SEO) রেঙ্কিংয়ের জন্য ব্যাকলিংক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আপনার ওয়েবসাইট বা ব্লগ সাইটের জনপ্রিয়তা, প্রাসঙ্গিকতা এবং আপনার সাইটের ডোমেইন অথরিটি বাড়ানোর ক্ষেত্রেও ব্যাকলিংকের গুরুত্ব থাকে।

যখন কোনো সার্চ ইঞ্জিন বট আপনার সাইটটি ক্রল করার জন্য আপনার সাইটের সমস্ত URL বা পেজগুলি পরীক্ষা করবে।

তখন সে খুব গভীর ভাবে লক্ষ্য করবে যে কত গুলি এবং হাই কোয়ালিটির ব্যাকলিংক আপনার সিটটিকে পয়েন্ট করছে।

আপনার সাইটে যত বেশি উচ্চ মানের ব্যাকলিংক থাকবে বা লিংক তৈরি করবেন। আপনার তত বেশি সুযোগ থাকবে গুগল সহ অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনে রেঙ্ক করার।

অর্থাৎ ব্যাকলিংকের গুরুত্ব হল:

  • আপনার সাইট অর্গানিক ভাবে সার্চ রেঙ্কিং করতে পারবে।
  • সাইটে অর্গানিক ভিসিটর্সের সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে।
  • আপনার সাইটের পেজগুলি গুগল সহ অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনে দ্রুত ইনডেক্স হবে।
  • তার সাথে আপনার সাইটের ডোমেইন অথরিটিও বৃদ্ধি পাবে।

ব্যাকলিংকের প্রকার

ব্যাকলিংক প্রধানত দুই রকমের হয়ে থাকে:

  1. dofollow
  2. nofollow

১. dofollow ব্যাকলিংকগুলি হল এসইও এর জন্য সব থেকে ব্যাবহৃত সাধারণ এবং গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান।

যখন আপনি সাইটে dofollow লিংক ব্যবহার করেন তখন গুগল সহ অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনকে বোঝান যে এই লিংকটি গুরুত্বপূর্ণ এবং এটিকে যাতে চিহ্নিত করা হয়।

dofollow লিংকের HTML এট্রিবিউটটি যেরকম দেখতে হয়:

<a href="https://www.technobong.in"> Link Text </a>

আপনি dofollow লিংকের HTML ভার্শনটি লক্ষ্য করলে বুছতে পারবেন যে এটি সাধারণ যে লিংক হয় সেই লিংক এট্রিবিউট।

২. nofollow ব্যাকলিংকগুলি অন্যদিকে ঠিক dofollow লিংকের বিপরীত হয়ে থাকে।

অর্থাৎ যখন আপনি সাইটে nofollow লিংক ব্যবহার করেন তখন গুগল সহ অন্য সার্চ ইঞ্জিন কে বোঝান যে এই লিংকটিকে যাতে উপেক্ষা করা হয়।

nofollow লিংকের HTML এট্রিবিউট যেরকম হয়:

<a href="https://www.technobong.in" rel=nofollow> Link Text </a>

এখন আপনি nofollow লিংকের HTML এট্রিবিউট লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন যে এখানে rel=nofollow কোডটি যুক্ত হয়েছে।

মানে এই HTML কোডটি ব্যবহারের মাধ্যমে বোঝানো হচ্ছে যে সার্চ রেঙ্কিংয়ের ক্ষেত্রে এই লিংকটিকে অগ্রাহ্য করা হোক।

ইন্টারনাল ও এক্সটার্নাল লিংক কি?

আপনি HTML পেজের মধ্যে আবার দুই রকম ভাবে লিংক বিল্ডিং করতে পারবেন, ইন্টারনাল ও এক্সটার্নাল লিংক তৈরি মাধ্যমে।

ইন্টারনাল লিংক হল যখন আপনি আপনার ওয়েবসাইটের একটি পেজে বা পোস্টের সাথে অন্য পেজ বা পোস্টগুলির লিংক তৈরি করেন।

একে ইনবাউন্ড লিংকও বলা হয়। এটি লিংক তৈরির সব থেকে জনপ্রিয় প্রদ্ধতি এবং এই ইন্টারনাল লিংক সবসময় dofollow লিংক হয়ে থাকে।

সার্চ ইঞ্জিনে রেঙ্কিংয়ের জন্য ইনবাউন্ড বা এক্সটার্নাল লিংকের ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

আপনি যদি সঠিক ভাবে ইন্টারনাল লিংক ব্যবহার বা তৈরির মাধ্যমে আপনার সাইটের পেজগুলি নেভিগেট করতে পারেন তাহলে সার্চ ইঞ্জিনে রেঙ্ক করতে সুবিধা হবে।

অন্যদিকে এক্সটার্নাল লিংক হল যখন আপনি আপনার ওয়েবসাইটের কোনো পোস্টার সাথে অন্য কোনো ওয়েবসাইটের পোস্টের লিংক তৈরি করেন।

একে আউটবাউন্ড লিংকও বলা হয় এবং এই লিংকটি dofollow এবং nofollow দুটিই হতে পারে।

সাধারণত হাই অথরিটি সাইটের লিংকের ক্ষেত্রে dofollow করা হয় অন্যথা এক্সটার্নাল বা আউটবাউন্ড লিংকগুলি nofollow করা হয়ে থাকে।

কিভাবে ব্যাকলিংক তৈরি করতে হয়?

আমি আপনাদের সেই সমস্ত তাবড় তাবড় ব্যাকলিংক তৈরি করার কথা বা উপায়গুলি বলে এখানে আপনাদের বিভ্রান্ত করবো না।

আমি আমার নিজের ভাষায় ও নিজের দক্ষতা থেকে প্রাপ্ত উপায়গুলিই শেয়ার করবো যার মাধ্যমে আপনি হাই কোয়ালিটির দীর্ঘস্থায়ী ব্যাকলিংক তৈরি করতে পারবেন।

১. ইন্টারনাল লিংক বিল্ডিং

আমরা আগেই ইন্টারনাল লিংক নিয়ে ওপরে জেনেছি। সেরকমই ব্যাকলিংক তৈরির ক্ষেত্রে ইন্টারনাল লিংকের ভূমিকা অনেক বেশি।

আপনি যদি সঠিক ভাবে আপনার কোনো পোস্টের সাথে অন্য পোস্টগুলির লিংক স্ট্রাকচার তৈরী করতে পারেন সেই ক্ষেত্রে অনেক ভালো ব্যাকলিংক তৈরী হবে।

একটি পোস্টের মধ্যে অন্যান্য পোস্টগুলির লিংক তৈরি করে ইউসারদের সেখানে প্রেরণ করার মাধ্যমে খুব সহজেই বাকি পোস্টগুলির জন্য বেশি ইউসার পেয়ে যাবেন।

২. গেস্ট পোস্টিং বা গেস্ট ব্লগিং

হাই কোয়ালিটি ব্যাকলিংক পাওয়ার সাথে সাথে নতুন ইউসারদের সাথে যুক্ত হওয়ার জন্য গেস্ট পোস্টিং বা ব্লগিং একটি অসাধারণ মাধ্যম।

গেস্ট পোস্টিং বা ব্লগিং হল এরকম কোন ওয়েবসাইট যেখানে আপনি একটি প্রোফাইল তৈরি করে সেই সাইটের গেস্ট হিসাবে আর্টিকেল পাবলিশ করতে পারেন।

যখন আপনি গেস্ট পোস্ট লেখেন সেই পোস্টের মধ্যে খুব সহজেই আপনার সাইটের বা সাইটের কোনো পোস্টের লিংক রিসোর্স হিসাবে প্রদান করতে পারেন।

এরফলে যেসব ভিসিটর্স সেই গেস্ট পোস্টটি পড়ে তখন তারা সেখানে আপনার তৈরি লিংক নেভিগেট করে আপনার সাইটেও ভিসিট করে।

গেস্ট ব্লগিং করে আপনি খুব সহজেই হাই কোয়ালিটির লিংক তৈরির মাধ্যমে প্রচুর নতুন ভিসিটর্স আপনার সাইটে নিয়ে আসতে পারবেন।

৩. ব্লগ কমেন্টিং

ব্যাকলিংক তৈরির জন্য ব্লগ কমেন্টিং হল জনপ্রিয় ও বহুল ব্যাবহৃত তার সাথে সব থেকে সহজ উপায় যা বহু ব্লগার করে থাকে।

আপনার ব্লগ টপিক বা Niche এর সাথে সম্পর্কিত এরকম কিছু ব্লগ সাইটের কমেন্ট সেকশনে কমেন্টের মাধ্যমে আপনার পোস্ট URL প্রদান করতে হবে।

আপনাকে সাধারণত ওই সমস্ত সাইটের ব্লগ পোস্টের কমেন্ট সেকশনে গিয়ে একটি ভালো কমেন্ট লিখে সেখানে আপনার সাইটের URL দিতে হবে।

আপনি যদি এরকম বেশকিছু ব্লগ সাইটের কমেন্ট সেকশনে আপনার ব্লগ পোস্টের URL প্রদান করতে পারেন তাহলে অনেক ভালো ব্যাকলিংক তৈরি হবে।

তবে সেই ক্ষেত্রে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন যে সেই সাইটগুলি যাতে জনপ্রিয় ও হাই অথরিটির হয়ে থাকে।

৪. প্রশ্ন-উত্তর ও ফোরাম সাইট

Quora, Reddit এবং Yahoo Answer এরকম বেশ কিছু হাই অথরিটি প্রশ্ন উত্তর ও ফোরাম সাইট আছে যেখান থেকে উন্নত মানের ব্যাকলিংক তৈরি করতে পারবেন।

আপনাকে এই সমস্ত সাইটে নিজের প্রোফাইল তৈরি করে সেখানে আপনার ওয়েবসাইট বা ব্লগ সাইটের URL যুক্ত করতে হবে।

তার সাথে এই সমস্ত সাইটে বিভিন্ন মানুষের করা প্রশ্ন যা আপনার ওয়েবসাইটের বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত সেই প্রশ্নগুলি নির্বাচন করে।

সেই প্রশ্নের একটি ভালো মানের উত্তর লিখে সেখানে আপনার সাইটের URL বা রিসোর্স হিসাবে আপনার আর্টিকেল লিংক যুক্ত করুন।

আপনার দেওয়া বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর যখন জনপ্রিয়তা পাবে বা অনেকে পড়বে সেখান থেকে আপনার সাইটেও অনেক নতুন ভিসিটর্স আসবে।

যখন আপনার এই সমস্ত প্রশ্ন উত্তর বা ফোরাম সাইট থেকে ভিসিটর্স আস্তে থাকবে তখন আপনার ওয়েবসাইটের ব্যাকলিংক তৈরী হয়ে যাবে।

৫. সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম

হাই কোয়ালিটি ব্যাকলিংক তৈরির জন্য সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মগুলি সত্যিই অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ করে এই ২০২০ সালে।

আমরা সবাই জানি যে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম এবং টুইটারের মতো সোশ্যাল মিডিয়া সাইট থেকে কত পরিমান ট্রাফিক পেতে পারি।

আপনি যদি এই সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম গুলিতে পেজ বা প্রোফাইল বানিয়ে সেখানে একটি ভালো সংখ্যার ফলোয়ার তৈরী করতে পারেন।

তাহলে সেখানে আপনার বিভিন্ন ব্লগ আর্টিকেল বা তার URL শেয়ার করার মাধ্যমে খুব সহজেই ব্যাকলিংক তৈরি করে নিজের সাইটে ভিসিটর্স নিয়ে আসতে পারবেন।

৬. ইউটিউব ভিডিও

এরকম বহু ব্লগার আছে যারা ব্যাকলিংক তৈরির জন্য ইউটিউব চ্যানেলের সাহায্য প্রথম থেকে নিয়ে আসছে আর যা এখনো কার্যকর।

এবং আমি বেক্তিগত ভাবে পরামর্শ দেবো আপনার যদি একটি ব্লগ সাইট থাকে তাহলে সেই বিষয়ের অপর অবশ্যই একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলুন।

আমরা জানি যে একটি ইউটিউব ভিডিওতে কত পরিমান ভিউস আসতে পারে। আপনি যদি একটি ইউটিউবে চ্যানেল শুরু করেন।

এবং নিজের ব্লগ টপিকের ওপরে বিভিন্ন ভিডিও তৈরী করে আপনার ব্লগ সাইটের লিংক সেই ভিডিওগুলির ডেসক্রিপশন বক্সে ব্যবহার করুন।

এবং ভিডিওর মাধ্যমে আপনার সাবস্ক্রাইবার বা ভিয়ার্সদের বলুন যে আপনার ব্লগ সাইটটি ভিসিট করতে সেই ক্ষেত্রে,

ইউটিউব ভিউস পাওয়ার সাথে সাথে আপনার ব্লগ সাইটের ভিসিটর্স সংখ্যায় বাড়বে এবং আপনার সাইটের ব্যাকলিংকও তৈরি হবে।

৭. অন্য ব্লগারদের সাহায্য নিন

ব্যাকলিংক তৈরি করার জন্য আরো একটি সহজ উপায় হল কোনো হাই অথরিটির ব্লগ সাইটের ব্লগারদের সাহায্য নেওয়া।

আপনার ব্লগ Niche অনুযায়ী অন্য যে ব্লগ সাইটগুলি আছে তাদের জিজ্ঞাসা করতে পারেন আপনার সাইটের লিংক তাদের সাইটে যুক্ত করার জন্য।

এছাড়াও যদি কোনো সাইট এর আগে আপনার সাইটের লিংক তার সাইটে ব্যবহার করে থাকে সেই ক্ষেত্রেও তার সাহায্য নিতে পারেন।

আমাদের শেষ করা:

তো বন্ধুরা আজকে আমার জানলাম যে ব্যাকলিংক কি, কেন এতো গুরুত্বপূর্ণ এবং কিভাবে আমাদের ব্লগ সাইটের জন্য ব্যাকলিংক তৈরি করতে পারবো।

আশা করছি যে আপনাদের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে কিছুটা হোক ব্যাকলিংক সম্পর্কে ধারণা বা তথ্য প্রদান করতে পেরেছি।

আপনাদের যদি এই আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই অন্যদের শেয়ার করুন এবং কমেন্টে আমায় জানান।

তার সাথে এই আর্টিকেল সম্পর্কিত কোনো প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসাবাদ যদি থেকে থাকে তাহলেও আমায় কমেন্টে জানান।