ইনস্টাগ্রাম থেকে টাকা আয় করার বিষয়টি হয়তো আপনিও বহুবার শুনেছেন এবং আপনিও চান এই সোশ্যাল প্লাটফর্মটি থেকে আয় করতে।
কিন্তু জানেন না যে কিভাবে এবং ঠিক কোন কোন উপায়ে এই প্লাটফর্মটি সঠিক ভাবে ব্যবহার করে আয় করতে হয়।
পূর্বে আমরা কিভাবে ফেসবুক থেকে আয় করা যায় জেনেছি, আর আজ জানবো যে ইনস্টাগ্রাম থেকে কিভাবে ইনকাম করবো।
এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতেই পারে যে আমিও কি ইনকাম করতে পারব? আর তার জন্য আমার কত ফলোয়ার থাকা চাই?
হ্যাঁ, অবশ্যই আপনিও ইনকাম করতে পারবেন তবে ফলোয়ারের বিষয়টি যদি বলি তাহলে যত বেশি ফলোয়ার থাকবে তাতো ভাল।
তবে এর মানে এই না যে আপনার ১ লক্ষ বা তার বেশি ফলোয়ার থাকলে তবেই ইনকাম করতে পারবেন নতুবা না।
তা একদমই না আপনি ১ হাজার ফলোয়ারেও ইনস্টাগ্রাম থেকে ইনকাম করতে পারেন।
কারণ এখানে শুধু ফলোয়ারের সংখ্যা বেশি থাকলেই হয় না তার সাথে আপনার ফলোয়ারদের একটিভিটি, আপনার রিচ ও ইনফ্লুয়েন্সিং করার কৌশল ইত্যাদিও প্রয়োজন হয়।
এরকম অনেক ইনস্টাগ্রাম একাউন্ট আছে যার ১ লাখের বেশি ফলোয়ার কিন্তু কোনো ১০ হাজার ফলোয়ারের একাউন্টের থেকেও কম ইনকাম করে।
তো চলুন এবার আমরা জেনেনি যে কোন কোনো উপায়ে ইনস্টাগ্রাম থেকে টাকা আয় করা যায় আর কিভাবেই বা তা করবো।
১. স্পন্সরড পোস্টের মাধ্যমে ইনস্টাগ্রাম থেকে আয় করুন
স্পন্সরড পোস্ট আবার প্রোমোটেড পোস্ট নামেও পরিচিত যেখানে ইনস্টাগ্রাম পোস্টের মাধ্যমে কোনো ব্র্যান্ড কে প্রচার করা হয়।
আর যে এই স্পন্সরড পোস্ট প্রমোট করে থাকে তাকে ইনস্টাগ্রাম ইনফ্লুয়েন্সের বলে। শব্দটি হয়তো অবশ্যই শুনেছেন আপনারা।
এখানে একজন ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেলার বা ইনফ্লুয়েন্সর কোনো ব্র্যান্ডকে অর্থের পরিবর্তে তার পোস্টের মাধ্যমে প্রমোট করে থাকে।
সম্ববত ইনস্টাগ্রাম থেকে ইনকাম করার সব থেকে জনপ্রিয় উপায় হল এই স্পন্সরড পোস্ট বা ইনস্টাগ্রাম ইনফ্লুয়েন্সার।
তবে এই ক্ষেত্রে অবশ্যই একটু বেশি ফলোয়ার ও তার সাথে ফলোয়ারদের সাথে ভালো কানেকশন ও এনগেজমেন্ট প্রয়োজন হয়।
তার সাথে এটাও গুরুত্বপূর্ণ যে নিয়মিত নিজের কনটেন্ট পোস্ট করার মাধ্যমে ও আরো বিভিন্ন উপায়ে ফলোয়ারদের সাথে এনগেজমেন্ট বজায় রাখা।
কারণ আপনি যদি শুধু মার্কেটিং বা প্রমোশনাল পোস্ট করেন সেই ক্ষেত্রে ফলোয়াররা আপনার কনটেন্টের প্রতি ইন্টারেস্ট হারাবে এবং আপনি ফলোয়ারস হারাবেন।
যেভাবে ইনফ্লুয়েন্সের হবেন:
- সবার প্রথমে আপনাকে একটি Niche বা টপিক নির্বাচন করতে হবে যা আপনার পার্সোনালিটির সাথে যায় এবং আপনি করতে ভালোবসেন।
- তার সাথে অবশ্যই নিজের ইনস্টাগ্রাম একাউন্টটি একটি বিসনেস একাউন্টে সুইচ করে নিন এতে আপনি বিশেষ কিছু সুবিধা পাবেন যেরকম এনালিটিক্স, লিংক ও আরো অন্যান্য।
- তারপর একটি আকর্ষণীয় বায়ো লিখুন যা ফলয়ার্সদের সাথে সাথে বিভিন্ন স্পন্সর ব্রান্ডকেও আকর্ষিত করবে এবং সেখানে আপনার সাথে যোগাযোগ করার মাধ্যমও যুক্ত করুন।
- কনটেন্ট পোস্ট করার ক্ষেত্রে অবশ্যই নির্দিষ্ট ধারাবাহিকতা বজায় রাখুন এবং প্রায়শই নতুন নতুন কনটেন্ট পাবলিশ করুন।
- প্রতিটি পোস্টের ক্ষেত্রে হ্যাশট্যাগ রিসার্চ করে সঠিক হ্যাশট্যাগ ব্যাবহার করুন যাতে আপনার পোস্ট আরো বেশি লোকের কাছে পৌঁছায়।
যেভাবে কোনো ব্র্যান্ড দ্বারা স্পন্সরড পাবেন:
- প্রথমত আপনি যেই Niche বা টপিকের ওপরে কাজ করছেন তা আপনি জানেন তাই আপনার প্রতিটি পোস্টের মধ্যে সেই ব্র্যান্ডগুলিকে ট্যাগ বা মেনশন করুন।
- সরাসরি কোনো ব্র্যান্ডকে ইমেইল বা অন্যান্য মাধ্যমে যোগাযোগ করে স্পন্সরড পেতে পারেন।
- এছাড়াও এরকম বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্ম আছে যেখানে আপনি নিজের ইনফ্লুয়েন্সের প্রোফাইল বানিয়ে রাখতে পড়েন এবং সেখানে স্পন্সরড পোস্ট প্রতি কত চার্জ নিতে চান তাও আপনি উল্লেখ করতে পারেন। এতে যখন কেউ আপনার দ্বারা তাদের ব্র্যান্ড প্রমোট করতে চাইবে তারা আপনার সাথে যোগাযোগ করে নেবে।
২. এফিলিয়েট মার্কেটিং করে ইনস্টাগ্রাম থেকে টাকা আয় করুন
ইনস্টাগ্রাম থেকে ইনকাম করার জন্য এফিলিয়েট মার্কেটিং অবশ্যই একটি ভালো উপায় এবং যা বহু ইনস্টাগ্রামার এই উপায়ে ইনকাম করছে।
একজন এফিলিয়েট হিসাবে আপনি এখানে অন্য কোনো কোম্পানির প্রোডাক্ট সেল করেন এবং পরিবর্তে সেই কোম্পানি থেকে কমিশন পান।
এফিলিয়েট প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে আপনাকে একটি ট্রেকেবেল লিংক প্রদান করা হয় এবং যখন কেউ ওই লিংক দ্বারা সেই প্রোডাক্ট ক্রয় করে।
তখন সেই প্রোডাক্টের কোম্পানি জানতে পারে সেটি আপনার এফিলিয়েট লিংক ছিল এবং পরিবর্তে আপনাকে এফিলিয়েট কমিশন প্রদান করা হয়।
তবে ইনস্টাগ্রামে এফিলিয়েট প্রোডাক্ট প্রোমোটের ক্ষেত্রে যে সমস্যাটি হয় তা হল আপনি সরাসরি পোস্টের মধ্যে এফিলিয়েট লিংক প্রদান করতে পারবেন না।
আপনি শুধু আপনার প্রোফাইল বায়োর মধ্যেই এই লিংক যুক্ত করতে পারবেন যার মানে হল আপনি একটি সময়ে একটি প্রোডাক্টই প্রমোট করতে পারবেন।
আপনি যখন এফিলিয়েট পোস্ট করবেন সেখানে “লিংক ইন বায়ো” মেনশন করে ফলোয়ারদের আপনার প্রোফাইলে পাঠাতে পারবেন।
তবে আপনি যে প্রোডাক্ট নিয়ে ইনস্টাগ্রাম এফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করতে চান তার বিষয়ে অবশ্যই ভালো ভাবে রিসার্চ করে নিতে হবে।
কারণ আপনাকে দেখতে হবে ওই প্রোডাক্ট ক্রয় করতে আপনার ফলোয়াররা কতোটুকু ইচ্ছুক হবে বা আপনি সেল করতে পারবেন।
তাই সর্বদা যে প্রোডাক্টের কোনভার্শন রেট ভালো এবং কাস্টমার রিভিউও ভালো শুধুমাত্র সেই প্রোডাক্টগুলি নিয়েই কাজ করুন।
এবং কখনোই একটির বেশি প্রোডাক্ট niche নিয়ে এফিলিয়েট প্রমোশন করতে যাবেন না এতে আপনি ফলোয়ার্স হারাতে পারেন।
যদি প্রথম থেকে আরো একবার বলি যে কিভাবে এফিলিয়েট প্রোগ্রামের দ্বারা ইনস্টাগ্রাম থেকে টাকা আয় করবেন ?
- সবার প্রথমে আপনাকে এফিলিয়েট Niche নির্বাচন করতে হবে যার ওপরে আপনি কাজ করতে ইচ্ছুক।
- এরপর আপনাকে একটি এফিলিয়েট প্লাটফর্মের সাথে যুক্ত হতে হবে যেখান থেকে প্রোডাক্ট নিয়ে আপনি প্রমোশন করবেন।
- প্রোডাক্ট নির্বাচন করার আগে অবশ্যই ভালো ভাবে রিসার্চ করে নিন যাতে সেই প্রোডাক্টের রিভিউ ও কনভার্সন রেট ভালো থাকে।
- আপনার এফিলিয়েট লিংক অবশ্যই বায়োতে যুক্ত করুন এবং প্রতিটি এফিলিয়েট পোস্টের মধ্যে মেনশন করুন যে এই প্রোডাক্ট যদি কেউ ক্রয় করতে চান তার লিংক প্রোফাইল বায়োতে আছে।
- সর্বদা এফিলিয়েট প্রোডাক্ট প্রমোট করতে যাবেন না যত সম্ভব বেশি অরিজিনাল কনটেন্ট পোস্ট করে ফলোয়ার্সদের সাথে এনগেজমেন্ট গড়ে তুলুন।
- এবং আপনার যেসমস্ত ফলোয়ার্স আছে তারা আপনার মেইন niche এর সাথে যেহেতু কানেক্টেড তাই সেই niche ছাড়া অন্য কোনো প্রোডাক্ট প্রমোট করতে যাবেন না।
কিছু এফিলিয়েট প্লাটফর্ম হল:
- Clickbank
- Amazon affiliate
- ShareAsale
- CJ Affiliate
- Maxbounty
৩. নিজের ফটো সেল করে ইনস্টাগ্রাম থেকে আয় করুন
আপনি যদি ভালো ফোটোগ্রাফি করে থাকেন সেই ক্ষেত্রে ইনস্টাগ্রামের মাধ্যমে সেই ফটো সেল করে আয় করতে পারবেন।
এই বিষয়টি নিশ্চই জানেন যে ইন্টারনেটে কতগুলি স্টক ফোটোগ্রাফি সাইট আছে যেখান থেকে বিভিন্ন মানুষ ফটো ক্রয় করে থাকে।
আপনিও সেই সমস্ত সাইটে কান্ট্রিবিউটর হিসাবে ইনস্টাগ্রাম থেকে ট্রাফিক পাঠিয়ে নিজের ছবি সেল করতে পারেন।
এছাড়া আপনি নিজের পোর্টফোলিও সাইট শুরু করতে পারেন যেখানে ঠিক একই ভাবে ইন্সটাগ্রাম থেকে আপনার ফটো প্রমোট করে সেল করতে পারবেন।
আপনি যত ভালো ফটো তুলতে, এডিট করতে ও কম্পোজিশন করতে পারবেন আপনার তাতো বেশি ফটো সেল করার সুযোগ থাকবে।
এরকম বিভিন্ন মার্কেটপ্লেস আছে যেখানে আপনি কান্ট্রিবিউটর একাউন্ট তৈরি করে নিজের ফটো সেল করতে পারবেন। যেরকম,
৪. নিজের প্রোডাক্ট অথবা রিসেলিং করে ইনকাম করুন
আপনার যদি নিজের বিসনেস থাকে তাহলে যেভাবে ইনস্টাগ্রামে অন্যান্য ব্র্যান্ড তাদের প্রোডাক্ট প্রমোট করে থাকে আপনিও সেই একই জিনিস করতে পারবেন।
ইনস্টাগ্রাম একটি অসাধারণ প্লাটফর্ম যেখানে আপনি নিজের ফোটোগ্রাফি স্কিল ও ক্রিয়েটিভ মার্কেটিং কৌশল কাজে লাগিয়ে নিজের বিসনেস ও প্রোডাক্টকে প্রমোট করতে পারবেন।
নিশ্চই দেখে থাকবেন যে ইনস্টাগ্রামে বিভিন্ন ব্র্যান্ডরা যেরকম নানান উপায়ে ক্রেয়েটিভ পোস্টের মাধ্যমে তাদের প্রোডাক্ট প্রমোট করে থাকে।
বিশেষ করে আপনার যদি ফ্যাশন, ফুড এবং বিউটি প্রোডাক্টের বিসনেস থাকে তাহলে এটি আপনার জন্য আদর্শ প্লাটফর্ম নিজের বিসনেসকে বাড়িয়ে তোলার।
এছাড়াও আপনার যদি নিজের কোনো প্রোডাক্ট না থাকে সেই ক্ষেত্রে আপনি রিসেলিং বিসনেস করে একই উপায়ে বা পদ্ধতিতে ইনস্টাগ্রাম থেকে আয় করতে পারেন।
আমাদের শেষ কথা:
আপনি যদি প্রথমে একটু সময় দিয়ে ও খেটে এখানে নিজের ভিতটি সঠিক ভাবে গড়ে তুলতে পারেন তাহলে আপনার জন্যেও ইনস্টাগ্রাম অর্থ উপার্জনের জন্য অত্যন্ত লাভজনক উপায় হতে পারে।
আপনিও যদি ইনস্টাগ্রাম থেকে টাকা আয় করার কথা ভেবে থাকেন তাহলে অবশ্যই এখান থেকে নিজের পছন্দের উপায়টি বেছে নিন।
তো বন্ধুরা আপনাদের যদি এই আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যও অন্যদের সাথে শেয়ার করুন ও আমায় কমেন্ট করে জানান।