জানুন অনলাইন শপিং করার গুরুত্বপূর্ণ টিপস ও ট্রিকস

এখন ট্রাডিশনাল ভাবে কেনাকাটা করার থেকে বেশিরভাগ মানুষই অনলাইন শপিং বা কেনাকাটা করতে ভালোবাসেন।

আর করবেই না কেন, যেখানে বাড়িতে বসেই নিজের ফোন অথবা কম্পিউটার থেকে নিজের পছন্দের প্রতিটি জিনিসই অর্ডার করতে পারছে।

আর বাড়িতে বসেই নিজের পছন্দের জিনিস গুলি পেয়ে যাচ্ছে তাই এই অনলাইনে কেনাকাটার করার ওপরেই মানুষের বেশি ঝোক বাড়ছে।

তাই এখন খুব বেশি দরকার না পড়লে বা ব্যতিক্রমী কিছু জিনিস ছাড়া আমরা কেউই নিজে গিয়ে জিনিস পত্র কেনাকাটা করি না।

তবে একথাও অস্বীকার করার নেই যে নিজে গিয়ে দোকান, মল বা হাট-বাজার থেকে শপিং করার যে মজা তা অনলাইনে নেই।

তবে আজকের এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ তাদের জন্য যারা বেশিরভাগ কেনাকাটা অনলাইনে করে থাকেন বা করতে পছন্দ করে।

কারণ আজকের এই আর্টিকেলে আপনি অনলাইন কেনাকাটা করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু টিপস, ট্রিকস এবং হ্যাক্স সম্পর্কে জানতে পারবেন।

যা আপনার পরবর্তী সমস্ত অনলাইন কেনাকাটাতে অনেক টাকা সাশ্রয় করতে সাহায্য করবে এবং তার সাথে,

কিভাবে অনলাইন শপিং বা কেনাকাটা করার সময় বিভিন্ন Scam বা Froud হওয়া থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হয় তাও জানতে পারবেন।

অবশ্যই পড়ুন: অনলাইন ইনকাম করার ৭টি সহজ উপায় ২০২০

অনলাইন শপিং কেনাকাটা টিপস এবং ট্রিকস
অনলাইন শপিং টিপস এবং ট্রিকস

অনলাইন শপিং সাশ্রয় সংক্রান্ত টিপস (Online shopping tips)

১. অন্যান্য সাইটের দামের সাথে তুলনা করে নিন

আপনি যখন অনলাইনে কোনো জিনিস ক্রয় করতে যাবেন তখন অবশ্যই সেই একই জিনিসটি আরো বিভিন্ন সাইটে সার্চ করুন।

কারণ বেশির ভাব ক্ষেত্রেই একই জিনিসের দাম বিভিন্ন সাইটে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। কোনো টাতে কম আবার কোনো টাতে বেশি।

তাই আপনি যদি এই একই প্রোডাক্ট বিভিন্ন সাইটে গিয়ে তুলনা করেন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সম্ভবনা থাকে অন্য সাইটে কম দামে পেয়ে যাবেন।

২. ব্রাউসার হিস্ট্রি ও কুকিজ ক্লিয়ার করে নিন

যারা অনলাইন শপিং করার জন্য ব্রাউজার ব্যবহার করেন তারা শপিং সাইটে ভিসিট করার আগে নিজেদের ব্রাউজার হিস্ট্রি ও কুকিজ ক্লিয়ার করে নিন।

কারণ হয় কি, যখন আমরা এসব সাইটে কিছু কেনার জন্য কোনো প্রোডাক্ট সার্চ করে থাকে কিন্তু সেই মুহূর্তে ক্রয় করিনা।

এবং পরের দিন বা বেশ কিছু দিন পর যখন ওই একই প্রোডাক্ট সার্চ করি তখন সেই প্রোডাক্টের দাম আগের থেকে অনেক বেশি দেখায়।

এটি হল ই-কমার্স সাইটের এলগরিদম যা ক্রেতাদের কোনো প্রোডাক্ট দ্রুত ক্রয় করতে বাধ্য করে এই ভেবে যে পরে আরো দাম বাড়তে পারে।

তাই নেক্সট টাইম ব্রাউজার ব্যবহার করে অনলাইনে কিছু কেনার আগে নিজের ব্রাউজার হিস্ট্রি ও কুকিজ অবশ্যই ক্লিয়ার করে নিন।

এতে আপনি আগের দামেই সেই একই প্রোডাক্টি ক্রয় করতে পারবেন।

৩. নির্দিষ্ট দিনে কেনাকাটা করুন

আপনি কি জানেন আপনি যদি নির্দিষ্ট কিছু দিনে অনলাইনে কেনাকাটা করেন তাহলে আরো বেশি ডিসকাউন্ট বা সাশ্রয় করতে পারবেন।

কিছু স্টাডি বা সার্ভেতে দেখা গেছে যে বুধ, বৃহস্প্রতি এবং শুক্রবারে অনলাইন সাইটে বেশি অফারস ও ডিসকাউন্ট পাওয়া যায়।

৪. কুপন সাইট ও টুলস ব্যবহার করুন

ইন্টারনেটে এরকম বিভিন্ন কুপন এবং ডিসকাউন্ট সাইট আছে যেখান থেকে আপনি ফ্রিতে বিভিন্ন ই-কমার্স সাইটের কুপন বা প্রমো কোড পেয়ে যাবেন।

আর এই কোড গুলি আপনি অনলাইন কেনাকাটার ক্ষেত্রে ব্যবহার করে বিভিন্ন রকমের ডিসকাউন্ট বা ছাড় পেয়ে যাবেন।

তাই পরবর্তী সময়ে যখন কিছু ক্রয় করবেন আর যদি ডিসকাউন্ট না পান তাহলে অবশ্যই ইন্টারনেটে প্রমো বা ডিসকাউন্ট কোড সার্চ করে নেবেন।

এছাড়াও আপনি যদি অনলাইন শপিংয়ের ক্ষেত্রে ব্রাউজার ব্যবহার করেন তাহলে Honey এবং Ebates এই দুটি এক্সটেনশন অবশ্যই নিজের ব্রাউজারে এড করে নিন।

এই দুটি এক্সটেনশন অটোমাটিক আপনার জন্য সঠিক প্রমো বা ডিসকাউন্ট কোড খুঁজে আপনার প্রোডাক্টের সাথে এড করে দেবে।

৫. প্রোডাক্ট কার্টে ফেলে রাখুন

সরাসরি ওয়েবসাইট থেকে নির্দিষ্ট কোনো প্রোডাক্টে ডিসকাউন্ট পাওয়ার জন্য আরো একটি উপায় হল সেই প্রোডাক্টটি কার্টে ফেলে রাখা।

কারণ যখন আপনি কোনো প্রোডাক্ট বেশ কিছু দিন ধরে কার্টের মধ্যে ফেলে রাখবেন তখন সেই প্রোডাক্ট আপনার কাছে বিক্রি করার জন্য।

সেই ওয়েবসাইট আপনাকে বিভিন্ন ডিসকাউন্ট বা ছাড় প্রদান করবে যাতে আপনি সেই প্রোডাক্টটি ক্রয় করে নেন।

তাই আপনি যদি একটু ধৈর্য্য রাখতে পারেন তাহলে আপনিও এই একই টিপস নিজের কোনো প্রোডাক্টের ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারেন।

৬. ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রাম থেকে ক্রয় করুন

এখন এরকম বিভিন্ন বিক্রেতা আছে যারা বেশি অর্থ ব্যয় করে Amazon বা অন্যান্য ই-কমার্স সাইটে তাদের প্রোডাক্ট সেল করতে পারে না।

তাই তারা বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া সাইট যেরকম ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করেন তাদের প্রোডাক্ট সেল করার জন্য।

অর্থাৎ যেহেতু এই সমস্ত বিক্রেতারা ফ্রি মাধ্যমে তাদের প্রোডাক্ট প্রমোট ও বিক্রয় করে থাকে তাই দামও অনেক কম হয়।

তাই আপনিও এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কিছু কেনার থাকলে অবশ্যই ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামেও সার্চ করে দেখতে পারেন।

৭. প্রিমিয়াম মেম্বারশিপ ক্রয় করুন

আমরা বেশিরভাগ লোকই Amazon, Flipkart এবং অন্যান্য শপিং সাইটের প্রিমিয়াম মেম্বারশিপ ক্রয় করি না, ভাবি যে বেকার অর্থ ব্যয়।

কিন্তু আপনি যদি কোনো সাইট থেকে প্রায় শপিং করে থাকেন তাহলে আপনার অবশ্যই তার প্রিমিয়াম মেম্বারশিপ ক্রয় করা উচিত।

কারণ এতে আপনি একজন সাধারণ কাস্টমারের থেকে অধিক পরিমান অফারস ও ডিসকাউন্ট পাবেন এবং সাথে ফ্রি ডেলিভারিও পাবেন।

যা একদিক থেকে আপনি টাকা ব্যয়ের চেয়ে অনেক টাকা সাশ্রয় করতে পারছেন।

৮. নিউজলেটার্স সাবস্ক্রাইব করে রাখুন

প্রতিটি ই-কমার্স সাইটেই নিউজলেটার্স সাইন আপ থাকে যা আপনি আপনার ইমেইল আইডি দ্বারা সাবস্ক্রাইব করতে পারবেন।

এর ফলে সেই ই-কমার্স সাইট থেকে আপনি বিভিন্ন অফার্স সংক্রান্ত ইমেইল নোটিফিকেশন পাবেন।

অবশ্যই পড়ুন: ৫টি সেরা অনলাইন ইনকাম অ্যাপস ২০২০

অনলাইন শপিং করার ক্ষেত্রে সচেতনতা সংক্রান্ত টিপস

১. গ্যারান্টি এবং রিটার্ন পলিসি দেখে

বিশেষ করে কোনো ইলেক্ট্রনিক প্রোডাক্ট ক্রয় করার আগে অবশ্যই সেই প্রোডাক্টের গ্যারান্টি এবং রিটার্ন পলিসি দেখে নেবেন।

তার সাথে যে ব্র্যান্ডের প্রোডাক্ট ক্রয় করছেন তার সার্ভিস সেন্টার আপনার কাছাকাছি থাকলে সেই ক্ষেত্রেই ক্রয় করা উচিত।

কারণ কোনো কারণ বসত যদি প্রোডাক্ট ডিফেক্ট বেড়ায় সেই ক্ষেত্রে যাতে তা সহজে রিটার্ন ও রিফান্ড দুটিরই সুবিধা পান।

এবং গ্যারান্টি বা ওয়ারেন্টিতে থাকা বা পরবর্তী সময়ে যদি কোনো সমস্যা দেখা দেয় তার সার্ভিস সেন্টার কাছাকাছি থাকলে আপনারই সুবিধা হবে তা দ্রুত রিপেয়ার করতে।

২. সর্বদা ক্যাশ অন ডেলিভারি পেমেন্ট নির্বাচন করুন

কোনো প্রোডাক্টের ওপর COD বা Cash on delivery উপলব্ধ থাকলে সর্বদা পেমেন্ট মেথড হিসাবে Cash on delivery-ই সিলেক্ট করুন।

এতে আপনি যখন প্রোডাক্টটি রিসিভ করবেন তখন পেমেন্ট করা আগে ডেলিভারি বয়ের সামনেই প্রোডাক্টি ঠিক আছে কিনা যাচাই করে নিতে পারবেন।

আর যদি প্রোডাক্টের মধ্যে কোনো ডিফেক্ট থাকে তখন পেমেন্ট ছাড়াই তা রিটার্ন বা ফেরত দিতে পারবেন ফলে আপনার টাকা পেন্ডিং থাকার কোনো সমস্যই থাকবে না।

৩. নতুন সাইট থেকে কিছু ক্রয় থেকে বিরত থাকুন

যদি এরকম কোনো ই-কমার্স সাইট থাকে যা নতুন এবং এর আগে কখনো সেই সাইট থেকে শপিং না করে থাকেন।

তাহলে সেখান থেকে কিছু ক্রয় না করাই ভালো আর যদিও করেন তো অবশ্যই COD এবং রিটার্ন পলিসি দেখে তবেই কিনবেন।

৪. রিভিউস ও রেটিং দেখে নিন

অনলাইন কিছু কেনার আগে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি দেখবেন তা হল সেই প্রোডাক্টের কাস্টমার রিভিউস কিরকম।

বিশেষ করে রিভিউস ফিলটার করে নেগেটিভ রেভিউগুলি দেখবেন এতে আপনি আরো ভালো ভাবে বুছতে পারবেন যে,

ওই প্রডাক্টি যেসমস্ত লোকেরা ক্রয় করেছে এবং ব্যবহার করছে তারা কোন খারাপ জিনিসগুলি অভিজ্ঞতা করছে বা কেন কম রেটিং দিয়েছে।

তাই সর্বদা কোনো প্রোডাক্ট ক্রয় করার আগে অবশ্যই ভালোভাবে তার ভালো ও খারাপ সমস্ত রেভিউসগুলি পরে নেবেন।

৫. অতি সস্তা প্রোডাক্টগুলি থেকে দূরে থাকুন

কোনো প্রোডাক্টের দাম যদি খুবই কম হয় এবং তার সাথে COD উপলব্ধ না থাকে তাহলে তা কখনোই ক্রয় করতে যাবেন না।

এই সমস্ত প্রোডাক্ট কখনোই ভালো হবে না, স্ক্যাম বা প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং ভবিষ্যতে অবশ্যই নানান সমস্যা দেখা দেবে।

৬. ডেবিট কার্ডের থেকে ক্রেডিট কার্ড নিরাপদ

আপনি যদি বেশির ভাগ সময় কার্ডে পেমেন্ট করে থাকেন এবং আপনার যদি ক্রেডিট কার্ড থাকে সেই ক্ষেত্রে ডেবিট কার্ডের পরিবর্তে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করা সব থেকে সেফ ও যুক্তিযুক্ত হবে।

কারণ কোনো কারণ বসত যদি কোনো প্রোডাক্ট রিটার্ন করান সেই ক্ষেত্রে আপনার রিফান্ড টাকা ক্রেডিট কার্ডে তৎক্ষণাৎ বা দ্রুত পাবেন।

৭. নতুন ই-কমার্স সাইটের ক্ষেত্রে কাস্টমার সাপোর্টে কল করুন

কোনো নতুন ই-কমার্স সাইট থেকে যদি কিছু কিনতে চান তাহলে সেই সাইটের কাস্টমার সাপোর্ট নম্বরে কল করে দেখতে পারেন তা কাজ করছে কিনা।

এতে আপনি বুছতে পারবেন যে সেই ই-কমার্স সেখান থেকে কিছু ক্রয় করা নিরাপদ ও যুক্তিযুক্ত হবে কিনা।

অবশ্যই পড়ুন: ySense থেকে অনলাইন সার্ভে করে আয় করুন

আমাদের শেষ কথা:

ডিসকাউন্ট এবং বিভিন্ন অফার্স আমাদের সবারই ভালো লাগে কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা তা আলাদা ভাবে খুজে থাকি না।

কোনো অনলাইন শপিং সাইটের মধ্যে যা দেওয়া থাকে তা যদি পছন্দ হয়ে যায় কিনেনি অধবা দাম কমার অপেক্ষা করি।

তাই আপনিও যদি এর আগে ওপরের কোনো বিষয়ে না জেনে থাকেন তাহলে অবশ্য এই টিপস ও ট্রিকস গুলি ব্যবহার করুন।

আর এই আর্টিকেলটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আমায় কমেন্ট করে জানান এবং অন্যদের সাথে শেয়ার করুন।