কিভাবে ওয়েবসাইটের লোডিং স্পিড বৃদ্ধি করবেন

কিভাবে ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইটের লোডিং স্পিড বৃদ্ধি করবেন?

আজকে আমরা জানবো কিভাবে আপনি আপনার ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইটের লোডিং স্পিড বৃদ্বি করতে পারবেন।

এরকম বহু ইউসার আছেন যারা ধীর ওয়েবসাইট লোডিং স্পিড সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে এবং কোনো মতেই তা ঠিক করে উঠতে পারছেন না।

যদিও অল্প বেশি আমাদের সবাইকেই এই সমস্যার মধ্যে পড়তে হয় কিন্তু কোনো কোনো সময় আমাদের ওয়েবসাইট মাত্রা অতিরিক্ত ধীর হয়ে পরে।

আজকে আমরা এই বিষয় নিয়েই আলোচনা করবো এবং আমাদের ওয়েবসাইট লোডিং স্পিড কিভাবে বৃদ্ধি কিভাবে করবো তা জানবো।

কিন্তু তার আগে আমাদের যে বিষয়গুলি জানা দরকার:

  • ওয়েবসাইট লোডিং স্পিড দ্রুত হওয়া কেনো দরকার ?
  • কিভাবে ওয়েবসাইটের লোডিং স্পিড পরিমাপ করবেন ?
  • কিভাবে ওয়েবসাইট লোডিং স্পিড বৃদ্ধি করবেন ?

ওয়েবসাইটর লোডিং স্পিড দ্রুত হওয়া কেনো দরকার ?

ওয়েবসাইট লোডিং স্পিড দ্রুত হওয়ার বহু প্রয়োজন আছে যা আপনার ওয়েবসাইটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

  1. Google বা Bing যে সমস্ত সার্চ ইঞ্জিন আছে তারা সেই সমস্ত ওয়েবসাইট গুলিকেই রেঙ্ক করায় যাদের লোডিং স্পিড দ্রুত। আপনি যদি আপনার ওয়েবসাইট রেঙ্ক করাতে চান তাহলে অবশ্যই আপনার ওয়েবসাইট লোডিং স্পিড দ্রুত হতে হবে। তা নাহলে আপনার ওয়েবসাইটের কন্টেন্ট যত ভালোই হোকনা কেন আপনি রেঙ্ক করতে পারবেন না বা বেশি ভিসিটর্স পাবেন না।
  2. একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, কোনো ওয়েবসাইটের লোডিং স্পিড যদি ২ সেকেন্ডের বেশি হয় তাহলে তার ৪৭% এর বেশি বাউন্স রেট থাকে। অর্থাৎ আপনি যদি আপনার ওয়েবসাইটে ৫০% অবদি ভিসিটর্স ধরে রাখতে চান তাহলে আপনার ওয়েবসাইট স্পিড ২ সেকেন্ডের মধ্যে নিয়ে আস্তে হবে।
  3. যদি আপনার ওয়েবসাইট লোডিং হতে অনেক বেশি সময় নেয় তাহলে ভিসিটর্স আপনার ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার আগেই বেরিয়ে চলে যাবে। এবং কম্পিউটারের সাথে সাথে মোবাইল ডিভাইসেও আপনার ওয়েবসাইটের লোডিং স্পিড দ্রুত হয় দরকার।

অর্থাৎ আপনি যদি আপনার ওয়েবসাইটের SEO বৃদ্ধি করতে চান এবং Google বা Bing এর মতো সার্চ ইঞ্জিনে রেঙ্ক করতে চান।

বা আপনার ভিসিটর্স যাতে আপনার ওয়েবসাইতে বেশি সময় ব্যয় করেম তাহলে তার জন্য অবশ্যই আপনার ওয়েবসাইট লোডিং সময় দ্রুত হতে হবে।

কিভাবে ওয়েবসাইট স্পিড পরিমাপ করবেন ?

আমাদের ওয়েবসাইট স্পিড দ্রুত নাকি ধীর বা দ্রুত বা ধীর হলেও তা কতটা সেটা আমাদের আগে জানা দরকার।

শুধু তাইনা, আমাদের ওয়েবসাইট ধীর বা স্লো হলে তা ঠিক কোন কারণের জন্য সেটা জানাও অবশ্যই আমাদের প্রয়োজন।

আমরা এরকম অনেকেই আছে যারা ভাবি যে আমাদের ওয়েবসাইট স্পিড দ্রুত কিন্তু তা সব সময় হয়না বিশেষ করে একজন নতুন ভিসিটর্সদের ক্ষেত্রে।

আমরা যখন কোন ওয়েবসাইটে ভিসিট করি তখন সেই ওয়েবসাইটের কিছু ফাইল আমাদের ব্রাউসারে লোড হয়ে যায় যা পরবর্তী সময় ওই ওয়েবসাইটে ভিসিট করলে আমরা দ্রুত ভিসিট করতে পারি।

কিন্তু যখন কোনো নতুন ভিসিটর্স একটি ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে চায় তার ঘটনাটি সম্পূর্ণ আলাদা হয়।

আপনি আপনার ওয়েবসাইট স্পিড পরিমাপের জন্য নিচের ওয়েবসাইটগুলির সাহায্য নিতে পারেন।

ওপরের ৩টি ওয়েবসাইট স্পিড চেকিং টুল ব্যবহার করে আপনি খুব সহজেই আপনার ওয়েবসাইট স্পিড পরিমাপ করতে পারবেন।

আপনি GTmetrix এবং Pingdom এই দুটি ওয়েবসাইট থেকে ওয়েবসাইট স্পিড পরিমাপের সাথে সাথে আপনার ওয়েবসাইট স্লো হওয়ার কারণগুলিও বুছতে পারবেন যেগুলি নিয়ে আমি নিচে আলোচনা করেছি।

কিভাবে ওয়েবসাইট লোডিং স্পিড দ্রুত করবেন ?

এবার আমরা জানবো যে কিভাবে অল্প কিছু উপায়ে আমরা আমাদের ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইটের লোডিং স্পিড দ্রুত করতে পারবো।

১. একটি ভালো হোস্টিং সিলেক্ট করুন

ওয়েবসাইট স্পিড ধীর হওয়ার একটি বড়ো কারণ হয়ে থাকে খারাপ হোস্টিং প্রোভাইডার। আপনি যদি সাধারণ কোনো হোস্টিং প্রোভাইডারের কাছ থেকে হোস্টিং নিয়ে থাকেন আপনাকে এই সমস্যার মধ্যে পড়তে হবেই।

এরকম অনেক হোস্টিং প্রোভাইডার আছে যারা কম দামে বা ডিসকাউন্ট দিয়ে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে হোস্টিং বিক্রি করে।

হোস্টিং কেনার সময় আমরাও যেই ভুলটি করে থাকি তাহলো কম দামের মধ্যে যে হোস্টিং দিচ্ছে সেখান থেকে হোস্টিং কিনি।

যারা হয়তো সমস্ত জিনিস কম দামের মধ্যে আনলিমিটেড দেয় কিন্তু সার্ভার কখনোই ভালো হয়না।

তাই যখন হোস্টিং কিনবেন অবশ্যই কোনো জনপ্রিয় এবং বিশ্বাসযোগ্য হোস্টিং প্রোভাইডারের কাছ থেকে হোস্টিং নেবেন যেরকম Bluehost, SiteGround, DegitalOcean এবং A2 Hosting.

তাতে অল্প হয়তো আপনাকে বেশি দাম দিতে হবে কিন্তু এরকম সমস্যার মুখোমুখি কখনোই হতে হবে না।

হোস্টিং কেনার সময় আমরা আরেকটি যে বড় ভুল করে থাকি তাহলো আমরা সব সময় Shared Hosting কেনার দিকে যাই।

কারণ Shared Hosting এর দাম অন্যান্য হোস্টিং এর থেকে কম হয়ে থাকেকিন্তু Shared Hosting এ একটি সার্ভারে রিসোর্সগুলিকে আরো কোস্টোমার বা ইউসারের সাথে শেয়ার করা হয়ে তাই Shared Hosting সবসময় ধীর হয়।

তাই হোস্টিং নেওয়ার সময় অবশ্যই কোনো ভালো হোস্টিং প্রোভাইডার সিলেক্ট করবেন এবং চেষ্টা করবেন Managed WordPress Hosting বা Cloud Hosting নেওয়ার।

২. হালকা এবং ভালো কোডিং করা থিম সিলেক্ট করুন

আপনার ওয়ার্ডপ্রেস থিমটির ওপরেও আপনার ওয়েবসাইট স্পিড নির্ভর করে। একটি খারাপ কোডিং করা এবং ভারী থিম আপনার ওয়েবসাইট স্পিড খুব সহজেই অনেক ধীর করে দিতে পারে।

এরকম অনেক ফ্রি ওয়ার্ডপ্রেস থিম আছে যা ভালো দেখতে এবং অনেক স্লাইডার বা বিভিন্ন কারুকার্য আছে কিন্তু সেই ওয়ার্ডপ্রেস থিমটি যদি ভালো কোডিং করা না থাকে বা হালকা এবং রেস্পন্সিভ না হয় তা আপনার ওয়েবসাইট অনেক ধীর করে দেবে।

তাই ওয়ার্ডপ্রেস থিম সিলেক্ট করার সময় অবশ্যই এই যিনিসগুলি মাথায় রাখবেন। আমি দ্রুত, হালকা এবং রেস্পন্সিভ ওয়ার্ডপ্রেস থিম নিয়ে একটি আর্টিকেল পোস্ট করে রেখেছি আপনি পড়তে পারেন:

৩. Content Delivery Network (CDN) ব্যবহার করুন

CDN নিয়ে আপনাদের অল্প বলে রাখি।

CDN (Content Delivery Network) সার্ভারের একটি উচ্চ-বিতরণ প্ল্যাটফর্ম যা সার্ভার এবং ব্যবহারকারীর মধ্যে শারীরিক দূরত্ব হ্রাস করে ওয়েব পেজ সামগ্রী দ্রুত লোড করতে সাহায্য করে।

ধরুন আপনার হোস্টিং সার্ভারটি USA তে আছে এবং কোন বেক্তি যদি USA থেকেই আপনার ওয়েবসাইটে ভিসিট করে তাহলে অনেক দ্রুত লোডিং স্পিড পাবে।

ঠিক বিপরীত ভাবে যদি কোনো ভিসিটর ভারত বা বাংলাদেশ থেকে আপনার ওয়েবসাইটে ভিসিট করে তার ক্ষেত্রে লোডিং স্পিড স্লো হবে কারণ সেই ক্ষেত্রে ভিসিটর এবং সার্ভারের দূরত্ব বেশি।

অন্যদিকে যখন আপনি CDN ব্যবহার করেন তখন আপনার ভিসিটর্সরা যেই লোকেশন থেকে আপনার ওয়েবসাইট ভিসিট করবে সেই লোকেশনের কোনো কাছাকাছি সার্ভারের সাথে তাকে সংযুক্ত করা হয় যার ফলে লোডিং স্পিড অনেক দ্রুত হয়।

Cloudflare একটি জনপ্রিয় ফ্রি CDN সার্ভিস আপনি এটি ব্যবহার করতে পারেন।

৪. Caching Plugin (ক্যাশিং প্লাগিন) ব্যবহার করুন

ওয়ার্ডপ্রেসে এরকম কিছু প্লাগিন্স আছে যা সত্যিই আমাদের বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করে, তার মধ্যে এরকম কিছু Caching plugins আছে যা আপনার সাইটের লোডিং স্পিড অনেক দ্রুত করে দেবে।

ওয়ার্ডপ্রেস ক্যাশিং প্লাগিন্সগুলির মধ্যে আমি বেক্তিগত ভাবে যে প্লাগিন্সগুলি ব্যবহার করে ফল পেয়েছি সেগুলি হল:

অবশ্যই যেকোনো একটি Caching প্লাগিন্স ব্যবহার করবেন। কখনোই দুটি প্লাগিন্স এক সাথে ব্যবহার করবেন না।

৫. ইমেজ বা ফটো কমপ্রেস এবং অপটিমাইজ করুন

ওয়েবসাইটের লোডিং গতি ধীর হওয়ার আরো একটি কারণ হলো ভারী এবং হাই রেসোলিউশন ফটো।

আমরা না জেনেই আমাদের ব্লগ পোস্টের সাথে ভারী এবং হাই রেসোলিউশন ইমেজগুলি আপলোড করে থাকি এবং যার ফলস্বরুপ লোডিং স্পিড ধীর বা কমে যায়।

তাই পরেরবার আপনার ব্লগ পোস্টের সাথে ফটো বা ইমেজ সংযোগ করার আগে সেগুলিকে অবশ্যই কমপ্রেস এবং অপটিমাইজ করে নেবেন।

সৌভাগ্যবসত এরকম অনেক ফ্রি ওয়ার্ডপ্রেস প্লাগিন আছে যার মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই আপনার ইমেজ গুলিকে কমপ্রেস এবং অপ্টিমাইজ করতে পারবেন।

তার মধ্যে Smush বলে একটি জনপ্রিয় ফ্রি প্লাগিন আছে যা নিজে থেকেই আপনার ইমেজেস গুলিকে কমপ্রেস এবং অপ্টিমাইজ করে দেবে এবং আপনার ইমেজ বা ফটোর কোয়ালিটিও নষ্ট হবেনা।

আমি নিজে Smush প্লাগিনটি ব্যবহার করছি যা সত্যিই অসাধারণ তাই আপনাদের এই প্লাগিনটিই ব্যবহার করার পরামর্শ দিচ্ছি।

৬. ওয়েবসাইট ইমেজে লেজি লোড (LazyLoad) যুক্ত করুন

যখন কোন ভিসিটর্স আপনার ওয়েবসাইটে ভিসিট করে তখন আপনার ওয়েবসাইটের সমস্ত ইমেজগুলি একসাথে লোড হয়ে দৃশ্যমান হতে অনেক সময় নেয় এবং যার ফলে আপনার ওয়েবসাইটের লোডিং স্পিড কমে যায়।

কিন্তু আপনি যখন ওয়েবসাইট ইমেজে লেজি লোড যুক্ত করেন তখন ইউসার ওয়েবসাইটের যেই অংশ টুকু ব্যবহার করছে শুধু সেই জায়গায় যদি কোনো ইমেজ থাকে সেটাই লোড হয়।

এবং যখন সে স্ক্রল করতে করতে নিচে নামতে থাকে ঠিক সেরকম ভাবেই একটি একটি করে ইমেজ তখন লোড হতে থাকে।

যেহেতু একসাথে সমস্ত ইমেজ একেবারে লোড হয়না তাই আপনার ওয়েবসাইট দ্রুত খোলে।

লেজি লোড ফিচারসটি আপনি ওপরের আলোচিত Smush প্লাগিনটির মধ্যেই পেয়ে যাবেন তাছাড়া আপনি Autoptimize বা A3 Lazy Load এর মধ্যেও যেকোনো একটি ব্যবহার করতে পারেন।

৭. ওয়ার্ডপ্রেস ডাটাবেস অপটিমাইজ করুন

আপনি ওয়ার্ডপ্রেস ডাটাবেস ক্লিন বা অপ্টিমাইজ করে আপনার ওয়েবসাইটের গতি আরো একটু বাড়িয়ে নিতে পারবেন।

বিভিন্ন ভাবে বারবার আমাদের ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহারের ফলে অব্যবহৃত কিছু জাঙ্ক ফাইল ডাটাবেসে জমতে থাকে যা আপনি ক্লিন করে আপনার ওয়েবসাইট পারফরমেন্স এবং স্পিড দুটিই বৃদ্ধি করতে পারেন।

আপনি WP-Optimize প্লাগিনটি ব্যবহার করে আপনার ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইটের ডেটাবেসে অপ্টিমাইজ এবং ক্লিন করতে পারবেন।

৮. অপ্রয়োজনীয় স্ক্রিপ্ট, প্লাগিন্স, থিম এবং অন্যান্য জিনিস সরিয়ে ফেলুন

ফেসবুক পেজ লাইক, সাবস্ক্রিপশন পপ আপ বাক্স এবং অন্যান্য আরো অপ্রয়োজনীয় স্ক্রিপ রিমুভ বা ডিলেট করে দিন।

এবং যদি এরকম কোনো থিম বা প্লাগিন্স থাকে যা মোটেই ব্যবহার হচ্ছেনা তাহলে অবশ্যই তা রিমুভ করে ফেলুন।

যেই থিমটি ব্যবহার করছেন সেটি ছাড়া বাকি কোনো থিম যদি ইনস্টলড করা থেকে তা ডিলেট করেদিন এবং সাথে সাথে যদি কোনো প্লাগিন্স থাকে যা আপনি ব্যবহার করছেন না সেগুলিও ডিলেট করেদিন।

কারণ এগুলি অযথা আপনার HTTP request বাড়াবে যার ফলে আপনার ওয়েবসাইটের লোডিং গতি কমে যাবে।

আমাদের শেষ কথা:

যখন আমি ব্লগিং শুরু করি আমিও ঠিক এই একই রকম সমস্যার মধ্যে পরি। এখানে প্রতিটি টিপস বা উপায় আমি আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম।

আশা করছি এগুলি আপনার ওয়েবসাইট স্পিড বৃদ্ধি করতে অবশ্যই সাহায্য করবে।

আমাদের এই আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকলে এবং কোনো প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসাবাদ থাকলে অবশ্যই আমায় কমেন্ট করে জানান এবং বাকিদের সাথে আর্টিকেলটি শেয়ার করুন।