অ্যান্ড্রয়েড ফটো এডিটিং অ্যাপস থেকে ফটোকে এডিট করে প্রফেসনাল এডিটিং লুক দেওয়া যায়না এরকম ধারণা আমাদের অনেকেরই আছে।
আমরা এটাই ভাবি যে একটি ফটোকে ভালোভাবে এডিট করা থেকে শুরু করে তাকে একটি প্রফেশনাল লুক দেওয়া শুধু কম্পিউটার ফটো এডিটিং সফ্টওয়ারের মাধ্যমেই সম্ভব।
কিন্তু এই ধারণাটি সম্পূর্ণভাবে ভুল নাহলেও অনেক ক্ষেত্রেই ভুল।
গুগল প্লে স্টোরে এরকম কিছু ফটো এডিটর অ্যাপস আছে যার মাধ্যমে আপনি আপনার ফটোগুলিকে ক্রিয়েটিভ লুকের সাথে সাথে
আপনার ফটোকে প্রফেশনাল ভাবে এডিটিং এবং ম্যানিপুলেটও করতে পারবেন যেরকম একটি কম্পিউটার ফটো এডিটর সফটওয়্যারের মাধ্যমে করা হয়।
ইউটিউবে মোবাইল ফটো এডিটিং নিয়ে এরকম অনেক টিউটোরিয়াল আছে। যেখানে আপনি অসাধারণ সব এডিটিং টিউটোরিয়াল দেখতে পাবেন।
যে কিভাবে শুধু মাত্র একটি মোবাইল ফটো এডিটর অ্যাপের মাধ্যমে একটি ফটোকে ক্রিয়েটিভ লুক এবং প্রফেশনাল টাচ দেওয়া সম্ভব।
তো আজকে আমরা এরকমই ৫টি অ্যান্ড্রয়েড ফটো এডিটিং অ্যাপস নিয়ে আলোচনা করবো যার মাধ্যমে আপনি প্রফেশনাল ভাবে ফটো এডিটিং করতে পারবেন।
৫টি সেরা অ্যান্ড্রয়েড ফটো এডিটর
এখানে যে ৫টি ফটো এডিটরকে নিয়ে আলোচনা করবো তা আপনি সম্পূর্ণ ফ্রিতে গুগল প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড ও ব্যবহার করতে পারবেন।
এর মধ্যে কিছু অ্যাপস আছে যার কিছু কিছু ফিচারস ব্যবহার করার জন্য টাকা দিয়ে কিনতে হতে পারে কিন্তু বাদবাকি আপনি ফ্রিতেই ব্যবহার করতে পারবেন।
তো চলুন এবার সেই ফটো এডিটিং অ্যাপসগুলি দেখা যাক:
১. Adobe Photoshop Lightroom

Adobe Lightroom CC যেটি হল একটি কম্পিউটার ফটো এডিটর যার সম্পর্কে হয়তো আপনি পরিচিত, তারই মোবাইল ভার্সনটি হল Adobe Photoshop Lightroom Mobile.
আপনি সম্পূর্ণ PC ভার্শনটির মতোই ৯০% সব ফিচারস ফ্রি মোবাইল ভার্শনটির মধ্যে পেয়ে যাবেন।
অবশ্যই এটিরও একটি পেইড ভার্সন আছে যার মধ্যে ২-৩টি ফিচারস আপনি বেশি ব্যবহার করতে পারবেন কিন্তু বাদবাকি ফিচারসগুলি ফ্রি।
এরকম কোনো ফোটোগ্রাফার নেই যিনি Adobe Lightroom ফটো এডিটরটির সাথে পরিচিত না বা ব্যবহার করেননি।
কম্পিউটার বা মোবাইল ভার্সন যাই হোকনা কেন আপনি আপনার ফটোকে এর মাধ্যমে এডিট করে এক অন্য মাত্রা এনে দিতে পারবেন।
আপনি Photoshop এর মতো হয়তো এতে কোর এডিটিং বা ফটো ম্যানিপুলেট করতে পারবেন না কিন্তু আপনার ফটোকে ক্রিয়েটিভ ও প্রেফেশনাল টাচ অবশ্যই দিতে পারবেন।
Adobe Lightroom যে একটি শ্রেষ্ঠ মোবাইল ফটো এডিটর তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
Adobe Lightroom এর ফিচারস বা বৈশিষ্ট্যগুলি হল:
- RAW ফটো এডিটিং সাপোর্ট।
- ফ্রি ক্লাউড স্টোরেজ এবং সিঙ্ক।
- অসংখ এডিটিং ফিচারস।
- সহজ মোবাইল ফ্রেন্ডলি UI
- দ্রুত এবং দারুন পারফরমেন্স।
- Batch এডিটিং।
- এর সাথেই নিজেস্ব ক্যামেরা।
- ফটো ব্যাকআপ সুবিধা।
২. Google Snapseed

Snapseed হল গুগলের একটি ফ্রি মোবাইল ফটো এডিটর অ্যাপ। lightroom এর মতোই আরেকটি অসাধারণ এন্ড্রোইড ফটো এডিটর।
Snapseed এর সহজ অ্যাপ layout বা UI এর জন্য এই অ্যাপটি যে কেউ ব্যবহার করতে পারে এবং খুব সহজেই ফটো এডিটিং করতে পারবে।
এর সিঙ্গেল ট্যাপ ফটো এডিটিং ফিচারস গুলি ব্যবহারকারীদের আরো সুবিধা প্রদান করে তাদের ফটোগুলিকে সহজে প্রফেশনাল ভাবে এডিট করতে।
এর অসংখ্য এডিটিং ফিচারস বা টুল যেরকম সাধারণ Crop থেকে শুরু করে Image tune, Curves, Perspectives, Selective, Healing Brush, Double Exposure এবং বিভিন্ন Filters ও Presets ইত্যাদি।
ব্যাবহার করে আপনি খুব সহজেই আপনার ফটোটিকে একটি কম্পিউটার ফটো এডিটেরের মতোই এডিট করতে পারবেন।
আপনার ফটো এডিটিং ক্রিয়েটিভিটি দেখানোর জন্য এই অ্যাপটি আপনার জন্য শ্রেষ্ঠ মোবাইল ফটো এডিটর।
Google Snapseed এর বিশেষ ফিচারস বা বৈশিষ্ট্যগুলি হল:
- ইউসার ফ্রেন্ডলি UI বা অ্যাপ layout.
- অসংখ্য এডিটিং টুল।
- সিঙ্গেল ট্যাপ এডিটিং ফিচারস।
- প্রি-মেড ফিল্টারস এবং প্রিসেটস।
- দ্রুত এবং দারুন পারফরমেন্স।
- Double Exposure এবং Healing Brush এর মতো প্রয়োজনীয় টুল।
3. Adobe Photoshop Mix

ফটো এডিটিংয়ের জন্য একটি প্রয়োজনীয় টুল বা ফিচারস যা সবাই একটি ফটো এডিটরের মধ্যে চায় সেটি হল ফটো থেকে তার ব্যাকগ্রাউন্ড রিমুভ করা।
অর্থাৎ একটি ফটো থেকে তার ব্যাকগ্রাউন্ডটি রিমুভ বা ডিলিট করে অন্য একটি ব্যাকগ্রাউন্ড সেই ফোটোটির সাথে যুক্ত করা।
যা অনেক ভালো ভালো ফটো এডিটরের মধ্যে এই বিশেষ বৈশিষ্ট্যটি দেখা যায়না।
আপনি যদি এরকমই একটি ফটো এডিটিং অ্যাপস খুঁজছেন যার সাহায্যে খুব সহজে যেকোনো ফোটোর ব্যাকগ্রাউন্ড রিমুভ এবং যুক্ত করা যায়।
তাহলে Adobe Photoshop Mix অ্যাপটি ব্যবহার করুন। এর সাহায্যে আপনি খুব সহজেই আপনার ফটো থেকে তার ব্যাকগ্রাউন্ড রিমুভ ও যুক্ত করতে পারবেন।
এছাড়াও আপনি এর মধ্যে অন্যান্য ফটো এডিটরের মতোই সমস্ত এডিটিং টুল বা ফিচারস পেয়ে যাবেন যা একটি সাধারণ ফটো এডিটরের মধ্যে হয়ে থাকে।
আপনি এখানে কোনো ফটো থেকে তার ব্যাকগ্রাউন্ড রিমুভ ও যুক্ত করে সরাসরি Adobe Lightroom এর মধ্যে এক্সপোর্ট করতে পারবেন।
এবং সেখান থেকে আপনি আপনার ওই ফটোটি চাইলে আরো ভালোভাবে এডিট করে ক্রিয়েটিভ লুক দিতে পারবেন।
Adobe Photoshop Mix এর ফিচারস বা বৈশিষ্ট্যগুলি হল:
- ফটো ব্যাকগ্রাউন্ড রিমুভ, কম্বাইন এবং তৈরী।
- অন্যান্য সমস্ত এডিটিং টুল।
- ব্যবহারে সহজ।
- ইউসার ফ্রেন্ডলি UI.
- এবং বিভিন্ন ফিল্টারস।
৪. PicsArt

PicsArt একটি জনপ্রিয় ফ্রি মোবাইল ফটো এডিটর যা নিয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। এই অ্যাপস টি প্লে স্টোরে ২০১২ সাল থেকে আছে।
অর্থাৎ এই অ্যাপসটি অনেক পুরোনো হলেও তার জনপ্রিয়তা এখনও ধরে রেখেছে। আমার মনে আছে যে আমার প্রথম এন্ড্রোইড ফোনের সব থেকে পছন্দের ফটো এডিটর অ্যাপ ছিল।
শুধু আমার না তখন সমস্ত ফোনে এই ফটো এডিটিং অ্যাপটি পাওয়া যেত। এবং যা সময়ের সাথে সাথে অনেক আপগ্রেড হয়েছে এই অ্যাপসটি।
আপনি যদি একটি অল ইন ওয়ান অ্যান্ড্রয়েড ফটো এডিটিং অ্যাপ চান যেখানে ফটো ব্যাকগ্রাউন্ড রিমুভ থেকে শুরু করে সমস্ত এডিটিং টুল এবং ফিল্টার ও প্রিসেটস পাবেন।
তাহলে PicsArt আপনার জন্য ওয়ান স্টপ অ্যান্ড্রয়েড ফটো এডিটর। তবে আপনি এই অ্যাপটির মধ্যে Ad দেখতে পাবেন যা একটু বিরক্তি কর।
সমস্ত এডিটিং টুল থেকে শুরু করে এফেক্টস, বিউটি মোড, ব্যাকগ্রাউন্ড রিমুভ, মাস্কিং, ব্রাশ, স্টিকার, টেক্সট, ড্র, ফ্রেম, কল আউট এবং প্রিসেটস ও ফিল্টার পেয়ে যাবেন।
PicsArt এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য বা ফিচারসগুলি হল:
- অল ইন ওয়ান এডিটিং অ্যাপ।
- ব্যাকগ্রাউন্ড রিমুভ, হিলিং ব্রাশ এবং মাস্কিং যা এর জনপ্রিয় বিশেষ ফীচার।
- ইউসার ফ্রেন্ডলি UI
- ব্যবহারে সহজ।
- বিভিন্ন ক্রিয়েটিভ ফিল্টার, এফেক্টস এবং প্রিসেটস।
৫. AirBrush

বিশেষত AirBrush অ্যাপটি হলো একটি রি-টাচ ফটো এডিটিং অ্যাপ। প্রোট্রেট এবং সেলফি জাতীয় ফটোগুলি এডিট করার জন্য এই অ্যাপটি শ্রেষ্ঠ।
আপনি আপনার সেলফি বা যেকোনো প্রোট্রেট ফটোকে পারফেক্ট লুক দিতে পারবেন এই অ্যাপটির মাধ্যমে।
এই অ্যাপটির মধ্যে আপনি ফেসিয়াল বা মেকআপ সম্পর্কিত এডিটিং টুল পাবেন। আপনি যদি প্রোট্রেট ফোটোগ্রাফি করেন বা,
সেলফি তুলতে পছন্দ করেন তাহলে অবশ্যই আপনার অ্যাপটি পছন্দ হবে। মেয়েদের জন্য এই অ্যাপটি বেশি জনপ্রিয়।
এখানে আপনি সমস্ত এডিটিং টুলের সাথে মেকআপ এবং ফিল্টার এই দুটি টুলও পাবেন যার মাধ্যমে আপনি আপনার প্রোট্রেট ফোটোটিকে আরো পারফেক্ট বানাতে পারবেন।
AirBrush এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য বা ফিচারসগুলি হল:
- একটি পারফেক্ট রি-টাচ এডিটিং অ্যাপ।
- সেলফি এবং প্রোট্রেট ফটো এডিটিংয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ।
- ইউসার ফ্রেন্ডলি UI
- বাকি অ্যাপগুলির মতোই ব্যবহারে সহজ।
- বিউটি মোড ও বিভিন্ন ফিল্টারস।
আমাদের শেষ কথা:
ওপরে যে ৫টি অ্যান্ড্রয়েড ফটো এডিটিং অ্যাপস সম্পর্কে আমরা জানলাম তা প্রায় সমস্ত ফটোগ্রাফার এবং এডিটরের পছন্দের কিছু এডিটিং অ্যাপস।
এবং যা অনেকেই পরিচিত এই ফটো এডিটিং অ্যাপসগুলির সাথে।
আপনি যদি এগুলির মধ্যে এখনো কোনো অ্যাপস ব্যবহার করে না থাকেন, তাহলে অবশ্যই ব্যাবহার করুন আপনার ফটোগুলিকে আরো সুন্দর ভাবে এডিট করতে।
আশা করছি যে আপনাদের মাঝে এরকম কোনো ফটো এডিটিং অ্যাপ তুলে ধরতে পেরেছি যা হয়তো আপনার আগে জানা ছিলোনা।
আর্টিকেলটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই অন্যদের সাথে শেয়ার করুন এবং আমায় কমেন্ট করে জানান আপনার পছন্দের ফটো এডিটিং অ্যাপ কোনটি।