ব্লগিং শুরু করার আগে যে বিষয়গুলি আপনার জানা দরকার

সবার প্রথমেই আপনাকে জানাবো অনেক শুভেচ্ছা আপনার নতুন ব্লগিং ক্যারিয়ার শুরু করার জন্য।

এবার আমরা জানবো যে একটি ব্লগ সাইট বা ব্লগিং শুরু করার আগে আমাদের কোন কোন বিষয়গুলি অবশ্যই জেনে রাখা দরকার।

এখানে আমি নিজে যেসব অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি আমার নিজের ব্লগিং লাইফ থেকে আজ সেগুলোই আপনার সাথে ভাগ করে নেবো।

তো চলুন জানা যাক একটি ব্লগ সাইট তৈরী করার আগে আমাদের কোন বিষয়গুলি জানা দরকার:

১. আপনি কোনো ব্লগিং শুরু করতে চান?

সবার প্রথমে নিজেকে একবার প্রশ্ন করুন যে আপনি কেন ব্লগিং শুরু করতে চাইছেন।

লেখালেখি করতে ভালোবাসেন এবং নিজের জীবনের কিছু অভিজ্ঞতা সবার সাথে ভাগ করে নিতে চান অন্যদের কিছু শেখানোর মাধ্যমে।

নাকি ব্লগিং করে লেখালেখির পাশাপাশি অর্থ উপার্জন করতে চেনা বা আপনার একমাত্র লক্ষ ব্লগিং করে অর্থ উপার্জন করার।

কারণ ব্লগিং লাইফে সাফল্য পেতে একটু সময় লাগে এবং আপনি যদি বাংলাতে ব্লগিং করতে চান সেই ক্ষেত্রে আপনার সাফল্য পেতে একটু দেরি হবে।

বাংলা ব্লগ থেকে সাফল্য পেতে দেরি হবে কারণ বাংলা কীওয়ার্ড লিখে সার্চ করা লোকের সংখ্যা অনেকেই কম তাই আপনার ওয়েবসাইটে ভিসিটর্সও কম আসবে।

তাই যদি শুধু মাত্র অর্থের জন্য ব্লগিং শুরু করেন এই ফিল্ডে একজন নবীন হয়ে তাহলে খুব তারা তারিই হার মেনে যাবেন।

এর মানে এই না যে অর্থ উপার্জনের জন্য ব্লগিং করা যায়না বা সাফল্য পাওয়া যায় না, তবে আপনি ব্লগিং যেই উদ্যেশেই শুরু করুন না কেন।

তার জন্য আপনাকে যথেষ্ট পরিশ্রম, সময় এবং নিষ্ঠা দিয়ে কাজ করতে হবে তাহলেই আপনি সাফল্য পাবেন।

যদি বাংলাতে ব্লগিং শুরু করতে চান তাহলে অবশ্যই বিষয়টি মাথায় রাখবেন যে প্রথমে ভিসিটর্স পেতে একটু দেরি হবে।

তবে ধীরে ধীরে বাংলা ব্লগ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এবং বহু মানুষ বাংলা কীওয়ার্ড লিখে সার্চ করছেন যেটি অবশ্যই একটি ভালো খবর।

এবং আশা করা যাচ্ছে যে একদিন বাংলা ব্লগেরও অনেক চাহিদা হবে তবে এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আপনাকে স্ট্রাগেল করতে হবে।

তাই নিজেকে অবশ্যই একবার প্রশ্ন করুন আপনি ব্লগিং কি জন্য শুরু করতে চাইছেন বা আপনার ব্লগিং করার উদেশ্য কি।

আপনার উদেশ্য যাই হোক না কেন নিজেকে সব দিক থেকে তৈরী করে তবেই এই রাস্তায় নামবেন।

২. কিভাবে ব্লগিং শুরু করতে চান

এরকম অনেকেই আছে যারা ফ্রিতে ব্লগিং শুরু করেত চায়, কারণ তাদের অর্থের সমস্যার জন্য ডোমেইন নাম এবং হোস্টিংয় কিনতে পারেন না।

আবার কিছু এরকম লোকও আছে যারা চায় ফ্রি মাধ্যম থেকে প্রথমে ব্লগিং শিখতে এবং ব্লগিং সম্পর্কে অবিজ্ঞতা অর্জন করতে।

তবে অবশ্যই মনে রাখবেন আপনি যদি ফ্রিতে ব্লগিং শুরু করতে চান সে আপনার উদেশ্য যাই হোকনা কেন সেই ক্ষেত্রে অনেক সীমিত থাকতে হবে।

এবং আপনি যদি সম্পূর্ণ স্বাধীন ভাবে ব্লগিং করতে চান এবং ব্লগিং করার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে অর্থ ব্যয় করতে হবে।

৩. সঠিক ব্লগ Niche বা বিষয় সিলেক্ট করুন

আপনি আপনার ব্লগ যেই Niche বা বিষয়ের ওপরে বানাতে চাইছেন সেই Niche সম্পর্কে অবশ্যই ভালো ভাবে রিসার্চ করে নিন।

আপনি যেই ব্লগ Niche বা বিষয়টি সিলেক্ট করেছেন তার ওপর যেন পর্যাপ্ত দৈনিক বা মাসিক সার্চ ভলিউম বা ট্রাফিক থাকে।

কারণ আপনি যদি এরকম কোনো Niche বা বিষয়ের ওপর আপনার ব্লগ সাইট তৈরী করেন যার সম্পর্কে খুবই কম লোক সার্চ করেন।

তাহলে আপনার ওই ব্লগ সাইটে কখনোই পর্যাপ্ত ভিসিটর্স আসবেনা বা বলতে পারেন আপনি আপনার উদ্যেশে সফল হতে পারবেন না।

তাই অবশ্যই এরকম কোনো Niche বা বিষয়ের ওপরে ব্লগ সাইট তৈরী করুন যেই বিষয় নিয়ে অনেক মানুষ সার্চ করে বা যার সার্চ ভলিউম বেশি।

৪. সঠিক ডোমেইন কিনুন

ডোমেইন নেওয়ার সময় অবশ্যই TLD ডোমেইনের মধ্যে পরে এরকম ডোমেইন নেবেন যেরকম .com, .in, .net, .org, .info ইত্যাদি।

আর অবশ্যই খেয়াল রাখবেন যে আপনার ডোমেইন নাম যাতে আপনার ব্লগ সাইটের Niche বা বিষয়কে সূচিত করে।

ডোমেইন কেনার আগে ভালো ভাবে রিসার্চ করে নেবেন যেই সাইট থেকে ডোমেইন নিচ্ছেন তা যেন জনপ্রিয় এবং বিশ্বাসযোগ্য প্রোভাইডার হয়।

৫. হোস্টিং নেওয়ার সময় এগুলি খেয়াল রাখুন

হোস্টিং কেনার সময় কখনোই কম দামে হোস্টিং প্রদান করছে এবং জনপ্রিয় না এরকম কোনো হোস্টিং প্রোভাইডারের কাছ থেকে কখনোই হোস্টিং কিনবেন না।

তাতে আপনাকে ভবিষ্যতে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হবে। তাই হোস্টিং কেনার সময় জনপ্রিয় এবং বিশ্বাযোগ্য সাইট থেকেই হোস্টিং কিনুন।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অবশ্যই যাচাই করে নেবেন যেখান থেকে হোস্টিং কিনছেন যাতে তাদের কাস্টমার সাপোর্ট ২৪ ঘন্টাই পাওয়া যায়।

আমরা অনেকেই আছি যারা Shared Hosting কেনার পেছনে দৌড়াই কারণ এই হোস্টিং প্লানের দাম কম থাকে এবং আমরা সহজে এফোর্ড করতে পারি।

কিন্তু অবশ্যই মনে রাখবেন শেয়ার্ড হোস্টিংয়ের ক্ষেত্রে একটি সার্ভারকে আরো কাস্টমারের সাথে ভাগ করা হয়।

অর্থাৎ আপনার হোস্টিংটি যেই সার্ভারের সাথে পরিচালিত হবে সেই সার্ভারটি আপনি ছাড়াও আরো কিছু লোক ব্যবহার করবেন।

তাই আপনার ওয়েবসাইট স্লো হবে এবং কোনো কোনো সময় সার্ভারের সমস্যা থাকেব। তাই আমি পরামর্শ দেবো শেয়ার্ড হোস্টিং থেকে দূরে থাকার।

৬. থিম সিলেক্ট করার আগে এই বিষয় গুলি যাচাই করে নিন

আপনার ব্লগ সাইটের থিম সিলেক্ট করার আগে অবশ্যই দেখে নেবেন যাতে থিমটি হালকা এবং দ্রুত হয়, সমস্ত ডিভাইসে রেস্পন্সিভ হয় এবং তার সাথে সাথে অবশ্যই SEO অপ্টিমাইজ হয়।

এরকম বহু থিম আছে যেগুলি ফ্রি এবং দেখতেও ভালো কিন্তু কোডিং যদি সঠিক ভাবে না হয়ে থাকে তাহলে তা আপনার সাইটকে ধীর করে দেবে।

৭. অবশ্যই এই পেজ গুলি ব্লগ সাইটে যুক্ত করুন

আপনার ওয়েবসাইটে অবশ্যই About us, Contact us, Disclaimer, Privacy policy এবং Terms & condition পেজ গুলি বানাবেন।

এর ফলে আপনার ওয়েবসাইট বা ব্লগ সাইটটি যে একটি স্ক্যাম ওয়েবসাইট না তা গুগল সহ বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিনে এবং ভিসিটর্স বুছতে পারবে।

আপনি যদি আপনার ব্লগ সাইটে গুগল এডসেন্স যুক্ত করতে চান তাহলে অবশ্যই এই পেজগুলি আপনার সাইটে থাকতে হবে।

৮. আপনার সাইটটিকে বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিনে ইনডেক্স করান।

আপনার ব্লগ সাইটটি কনটেন্ট লেখার জন্য তৈরী হয়ে গেলে অবশ্যই Google, Bing এর মতো সার্চ ইঞ্জিনগুলির সাথে ইনডেক্স করাবেন।

কারণ একটি সাইটকে নিজে থেকে ইনডেক্স হতে বেশ কিছু মাস সময় লেগে যায় আর আপনি যদি মেনুয়ালি তা করেন তাহলে ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই আপনার সাইটটিকে বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিনে লাইভ হয়ে যাবে।

৯. আপনার কনটেন্টই সবকিছু

চেষ্টা করবেন সবসময় আলাদা অর্থাৎ ইউনিক আর্টিকেল লেখার এবং কখনোই অন্য কারো সাইটে থেকে আর্টিকেল কপি করবেন না

শুধু আর্টিকেলেই না ফটো এবং ভিডিওর ক্ষেত্রেও কখনোই অন্য কারো সাইট থেকে কপি করে নিজের সাইটে পাবলিশ করবেন না।

অবশ্যই চেষ্টা করবেন প্রতিটি আর্টিকেলে শব্দের সংখ্যা যাতে ৭০০ টির বেশি থাকে এই ক্ষেত্রে আপনার এডসেন্স এপ্রভাল পেতে সুবিধা হবে।

আপনি যখনি কোনো বিষয়ের ওপর আর্টিকেল লিখবেন তার আগে যথেষ্ট সময় দিয়ে কীওয়ার্ড রিসার্চ করবেন এবং তা আর্টিকেলে ব্যবহার করবেন।

১০. ব্যাকলিংক তৈরী করুন

আপনার আর্টিকেলগুলি চেষ্টা করবেন বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে শেয়ার করতে এতে আপনার সাইটের ব্যাকলিংক তৈরী হবে এবং আরো ট্রাফিক আসবে।

একটি ওয়েবসাইটে বেশি ট্রাফিক নিয়ে আসতে এবং কোনো সাইটকে রেঙ্ক করতে ব্যাকলিংক অনেক বড় ভমিকা পালন করে।

সবার শেষে এটাই বলবো নিজেকে এবং আপনার সাইটটিকে উন্নত করার জন্য অনেক পরিমানে রিসার্চ করবেন।

আমাদের শেষ কথা:

এখানে আমি সেইসব বিষয়গুলিই তুলে ধরলাম যা আমি আমার ব্লগিং জার্নি থেকে শিখেছি এবং বুছতে পেরেছি যে এই বিষয়গুলি জেনে রাখা দরকার প্রতিটি নতুন ব্লগারকে।

আশা করছি যে এখন থেকে প্রতিটি নতুন বা পুরোনো ব্লগার যে ব্লগ শুরু করতে চাইছে বা করে দিয়েছে কিছু না কিছু সহজ পাবে।

আমাদের এই পোস্টটি ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানান এবং অন্যদের সাথে শেয়ার করুন।