কিভাবে ইউটিউবে ভিউ বাড়বে

কিভাবে ইউটিউব ভিডিওর ভিউ বাড়াবেন জেনেনিন

ইউটিউব হল বিশ্বের দ্বিতীয় সর্ব বৃহৎ সার্চ ইঞ্জিন গুগলের পর এবং বিশ্বের সব থেকে জনপ্রিয় ফ্রি ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম।

এখানে যে কেউ চাইলে একটি চ্যানেল তৈরী করে সেখানে তার পছন্দের যেকোনো ভিডিও বানিয়ে সেই চ্যানেলে তা আপলোড করতে পারে।

আমরা জানি যে ইউটিউব ভিডিওর মাধ্যমে কেউ তার দক্ষতা দেখাতে পারে, অন্যদের কিছু শেখাতে পারে এবং ভিডিওর মাধ্যমে বিভিন্ন লোকেদের বিনোদন করতে পারে।

তবে এগুলির থেকেও যেই উদ্যেশের জন্য একটি ইউটিউব চ্যানেল খোলা হয় তা হল ইউটিউব ভিডিওর মাধমে অর্থ উপার্জনের জন্য।

আর এই ২০২০ সালে এরকম কোনো ইউটিউব চ্যানেল নেই যে সে তার ইউটিউব ভিডিও থেকে অর্থ উপার্জন করতে চায় না।

কিন্তু ইউটিউব ভিডিও থেকে আয় করার জন্য চাই পর্যাপ্ত পরিমান ভিউস ও সাবস্ক্রাইবার অর্থাৎ ভিউস যত বেশি হবে আপনার আয়ও তত বেশি হবে।

কারণ ইউটিউব থেকে প্রাথমিক যে উপায়ে আয় হয় তা হল গুগল এডসেন্সের মাধ্যমে ভিডিওর মধ্যে অ্যাড দেখিয়ে।

গুগলের মতোই ইউটিউবের নিজেস্ব এলগোরিদম আছে যা অনেক অ্যাডভান্স ও ইন্টেলিজেন্ট এবং সেই এলগারিদম অনুযায়ীই কোনো ভিডিও রেঙ্ক হয়ে থাকে।

তাই আপনার ভিডিওকে রেঙ্ক করাতে গেলে অবশ্যই ইউটিউব এলগরিদমের সেই সমস্ত জিনিসগুলি অনুসরণ করতে হবে

অর্থাৎ একটি ব্লগ সাইটে অধিক ট্রাফিক নিয়ে আসতে যেরকম এসইও করতে হয় সেরকম ভাবেই আপনাকে ইউটিউব চ্যানেল এসইও করতে হবে।

তো আজকে আমরা জানবো ঠিক কোন কোন জিনিসগুলি কিভাবে করলে ইউটিউবে ভিউ বাড়বে বা ইউটিউব ভিডিও ভাইরাল করবো।

চলুন এবার আমরা জেনেনি কিভাবে বেশি ইউটিউব ভিউ পাওয়া যায় বা ইউটিউব এসইও কিভাবে করবো।

কিভাবে ইউটিউব ভিডিওর ভিউ বাড়াবেন

ইউটিউব ভিডিওর ভিউস বাড়ানোর জন্য যে সমস্ত বিষয়গুলি অনুসরণ করতে হবে সেগুলি হল:

১. কীওয়ার্ড রিসার্চ করুন

এরকম অনেক ইউটিউবার আছে যারা ভিডিও তৈরী করার আগে কখনোই কীওয়ার্ড রিসার্চ করে না, বিশেষ করে নতুন ও বাঙালি ইউটিউবাররা।

ইউটিউব ভিডিওয় তৈরী করার আগে অবশ্যই কীওয়ার্ড রিসার্চ করা প্রয়োজন কারণ যেই টপিকের ওপরে আপনি ভিডিও তৈরী করতে যাচ্ছেন।

সেই টপিক সম্পর্কে কেউ যদি কোনো ভিডিও দেখতে না চায় বা সেই টপিকটি নিয়ে কেউ যদি সার্চই না করে তাহলে ভিউস কখনোই আসবেনা।

অন্যদিকে কীওয়ার্ড রিসার্চের মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন কোন টপিকের ওপর কত সার্চ ভলিউম আছে বা কোন টপিক নিয়ে মানুষ জানতে বেশি আগ্রহী ও সার্চ করে।

তাই অবশ্যই কীওয়ার্ড রিসার্চ করুন এবং যেই বিষয় বা টপিক নিয়ে লোকে বেশি সার্চ করে ও বেশি ভিডিও দেখে তার ওপর ভিডিও তৈরী করুন।

কীওয়ার্ড রিসার্চ করার জন্য নিচের তিনটি সাইট ব্যাবহার করতে পারেন:

২. উন্নত মানের কনটেন্ট তৈরী করুন

একটিও জনপ্রিয় কথা আছে “কনটেন্ট ইজ কিং” অর্থাৎ আপনার কন্টেন্টই রাজা বা সবকিছু তা একটি ব্লগের ক্ষেত্রে হোক বা ইউটিউব ভিডিও।

সব সময় চেষ্টা করুন একটি উন্নত মানের ও ভালো কোয়ালিটির কনটেন্ট তৈরী করতে যা দেখে আসলেই কোনো ভিয়ার্স উপকৃত হয়।

এরকম ভিডিও বা কনটেন্ট তৈরী করুন যা ভিয়ার্সদের চাহিদা, প্রয়োজনীয়তা ও সমস্যা দূর করবে এবং আপনার কনটেন্ট থেকে উপকৃত হবে।

যখন আপনি এরকম কনটেন্ট তৈরী করবেন ইউটিউব আপনার ভিডিওকে রেঙ্ক করাবে ও অন্যান্য ভিয়ার্সদের আপনার ভিডিও সাজেস্ট করবে।

কারণ ইউটিউব বুছতে পারবে যে আপনার ভিডিও দেখে অন্যরা উপকৃত হচ্ছে বা হবে তখন সে নিজে থেকেই আপনার ভিডিওগুলি প্রমোট করবে।

৩. টাইটেল ও ডেসক্রিপশন বক্সে কীওয়ার্ড ব্যবহার

কীওয়ার্ড রিসার্চ করার আর একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল আপনার ইউটিউব ভিডিওতে কীওয়ার্ড ব্যবহার করে ইউটিউব এসইও করা।

যেই টপিকের ওপরে ভিডিও তৈরী করবেন সেই টপিক নিয়ে কীওয়ার্ড রিসার্চ করে সঠিক ভলিউমের কীওয়ার্ডটি আপনার ভিডিও টাইটেলে ব্যবহার করুন।

এবং তার সাথে সাথে ওই একই টপিকের ওপর আরো কিছু হাই ভলিউম কীওয়ার্ড সিলেক্ট করে রাখুন এবং তা ডিসক্রিপশনে ব্যবহার করুন।

আপনার ভিডিওতে আপনি যা বোঝাতে চেয়েছেন তা নিয়েই ডিসক্রিপশনে একটি ছোট আর্টিকেল লিখুন এবং তাতে কীওয়ার্ডগুলি প্রয়োগ করুন।

ইউটিউব এলগোরিদম অনুযায়ী এটা প্রমাণিত যে আপনার ভিডিওর মধ্যে সার্চ করা টার্গেটেড কীওয়ার্ড বেশি পাওয়া গেলে আপনার ভিডিও সবার প্রথমে আসবে।

তার সাথে সাথে অবশ্যই আপনার সমস্ত ভিডিওর ডেসক্রিপশনে অন্যান্য ভিডিওর লিংক যুক্ত করে রাখুন।

৪. এট্রাক্টিভ কাস্টম থাম্বনেইল বানান

যখন ইউটিউবে আমরা কোনো বিষয় নিয়ে সার্চ করি সেই সার্চ রেজাল্টের মধ্যে সবার প্রথমে যে জিনিসটি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তা হল থাম্বনেইল।

আর আমরা ওই থাম্বনেইল দেখেই সেই ভিডিওটির ওপর ক্লিক করি এবং কখনো কখনো তো ভিডিওর টাইটেল ও দেখিনা আমরা।

অর্থাৎ বেশিরভাগ লোক থাম্বনেইল দেখেই কোনো ভিডিওর ওপর ক্লিক করে।

তাই অবশ্যই কাস্টম থাম্বনেইল তৈরী করুন এবং এরকম ভাবে তৈরী করুন যাতে লোকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাকে বাধ্য করে আপনার ভিডিওতে ক্লিক করতে।

বিশেষত থাম্বনেইলের মধ্যে এরকম কোনো শব্দ বা ফটো যুক্ত করুন যা দেখে বোঝা যায় আপনার ভিডিওর বিষয় কি।

৫. ভিডিওতে সঠিক ভাবে ট্যাগ ব্যবহার করুন

ইউটিউব ভিডিও ট্যাগ থেকেই বুছতে পারে যায় যে আপনার ভিডিওটি ঠিক কোন বিষয় বা টপিকের ওপর তৈরী করা হয়েছে।

এছাড়াও ভিডিও ট্যাগ ইউটিউব এলগোরিদমকে সাহায্য করে আপনার ভিডিও সঠিক ভিয়ার্স বা যারা দেখতে চায় তাদের কাছে পৌঁছে দিতে।

তাই ভিডিও আপলোড করার পূর্বে অবশ্যই ট্যাগ ব্যাবহার করুন এবং প্রথম ট্যাগে আপনার ভিডিওর টপিকের মেইন কীওয়ার্ড ব্যবহার করুন।

৬. কার্ড ও এন্ড স্ক্রিন

কার্ড ও এন্ড স্ক্রিনস হল সেই দুটি জিনিস যা ইউটিউব এলগোরিদম বাইপাস করে অর্থাৎ এতে অনেকটাই আপনার কন্ট্রোল বা নিয়ন্ত্রণ থাকে।

ভিডিওর মধ্যে মাঝে মাঝেই একটি আই বা “i” বাটন পপ-আপ হয়ে ভিডিও স্ক্রিনে ফুটে আসে, তা হল কার্ড যেখানে আপনি কোন ভিডিও যুক্ত করতে পারেন।

সাধারণত আপনি ইউটিউবে কোন ভিডিও আপলোড করার আগে আই বাটনে আপনার অন্য কোন ভিডিও সংযুক্ত করতে পারবেন।

যা আপনার অন্য ভিডিওগুলিতে ভিউস পেতে সাহায্য করবে তাই পরামর্শ দেবো ভিডিওর মধ্যে কার্ড ব্যবহার করে অন্যান্য ভিডিও যুক্ত করার।

আপনি ভিডিওর মধ্যেই দর্শকদের বলতে পারেন যে “ওপরে আই বাটনে গেলে আপনি উমুক ভিডিওতে দেখতে পাবেন”

এই ক্ষেত্রে সম্বভনা বেশি থাকে যে আপনার কিছু ভিয়ার্স আই বাটান থেকে আপনার মেনশন করা ভিডিওটি দেখবে।

এন্ড স্ক্রিনস এর ক্ষেত্রে আপনি আপনার ভিডিওর একদম শেষে আপনার পূর্বে আপলোড করা একটি বা দুটি ভিডিও যুক্ত করতে পারবেন।

আর যা সত্যিই আপনার অন্য ভিডিও গুলির ভিউস বাড়াতে অনেক সাহায্য করে। তাই নতুন ভিডিও আপলোড করার আগে সেই ভিডিওর এন্ড স্ক্রিনে আপনার অন্যান্য ভিডিও যুক্ত করুন।

৭. ভিডিওর মধ্যে আপনার ভিয়ার্সদের সাবস্ক্রাইব করার কথা বলুন

আপনার ইউটিউব চ্যানেলে যত বেশি সাবস্ক্রাইবার থাকবে আপনার ইউটিউব ভিউ আসার সম্ভাবনা ততই বেশি হবে।

কারণ যখন আপনার একটি নির্দিষ্ট পরিমান সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা থাকবে আপনি সেই সাবস্ক্রাইবারদের কাছ থেকেই অনেক ভিউস পেয়ে যাবেন।

তাই প্রতিটি ভিডিওতে আপনার ভিয়ার্সদের বলুন যে এরকম আরো নতুন নতুন ভিডিওর পেতে অবশ্যই চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন।

৮. ভিয়ার্স ও সাবস্ক্রাইবার দের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলুন

যতটা পারেন আপনার ইউটিউব ভিডিওর কমেন্ট সেকশনে ভিয়ার্স ও সাবস্ক্রাইবার দের করা কমেন্টের রিপ্লাই দেওয়ার চেষ্টা করুন।

এতে ভিয়ার্স, সাবস্ক্রাইবার ও আপনার মধ্যে সম্পর্ক গড়ে উঠবে যার ফলে আপনার চ্যানেলের প্রতি ওদের বিশ্বাস তৈরী হবে।

তার পাশা পাশি নতুন ভিয়ার্সরা আপনার চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করবে যা আল্টিমেটলি ভবিষ্যতে আপনার নতুন ভিডিওগুলিতে বেশি ভিউস আসবে।

৯. প্লে লিস্ট তৈরী করুন

আপনার চ্যানেলের বিভিন্ন ভিডিওগুলির নির্দিষ্ট টপিক অনুযায়ী তাদের প্লে লিস্ট তৈরি করে এন্ড স্ক্রিন, আই বাটনে যুক্ত করুন ও ডিসক্রিপশন বক্সে লিংক প্রদান করুন।

সাধারনত আমাদের যখন কোন ভিডিও দেখা শেষ হয়ে যায় আমরা তখন সাথে সাথে পাশের ভিডিও লিংকে ক্লিক করি বা নতুন কিছু সার্চ করি।

কিন্তু আপনি যখন প্লে লিস্ট তৈরী করবেন এবং তা কেউ দেখলে আপনার একটি ভিডিওর শেষের ওপর অটোমেটিক আপনার প্লে লিস্টের পরের ভিডিওটি শুরু হয়ে যাবে।

এর ফলে আপনি আপনার ভিয়ার্সদের আপনার ভিডিওর মধ্যেই ধরে রাখতে পারবেন যার ফলে আপনার এক সাথে অনেকগুলি ভিডিওর ভিউস বাড়বে।

১০. সোশ্যাল মিডিয়া ও Niche বা টপিক কমিউনিটি সাইটে শেয়ার করুন

ইউটিউব ভিউ বৃদ্ধি করতে বা ইউটিউব ভিডিওতে অনেক অর্গানিক ভিউ নিয়ে আসতে সোশ্যাল মিডিয়া সাইটের কোনো বিকল্প নেই।

তাই আপনার প্রতিটি নতুন ভিডিও আপলোড করার পর ফেইসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টুইটারের মতো সোশ্যাল মিডিয়া সাইটে শেয়ার করুন।

তার সাথে সাথে Quora, Reddit ও ফোরামের মতো Niche বা টপিক বেস সাইটগুলিতে অবশ্যই ভিডিও শেয়ার করুন।

এই সমস্ত সাইট থেকে আপনার ইউটিউব ভিডিওতে দ্রুত ও অনেক বেশি ভিউস খুব সহজেই অর্জন করতে পারবেন।

১১. ক্রোম এক্সটেনশন

এরকম কিছু ইউটিউব ক্রোম এক্সটেনশন আছে যা আপনাকে বেশি ভিউস, সাবস্ক্রাইবার ও আপনার চ্যানেলকে গ্রো করতে সাহায্য করবে।

যেরকম:

  • VidIQ
  • TubeBuddy
  • Social Blade

বিশেষত আপনাকে এই এক্সটেনশনগুলি কীওয়ার্ড রিসার্চ, অন্যদের রেঙ্ক করা ভিডিও ট্যাগ ও এনালিটিক্স দেখতে সাহায্য করবে।

১২. ইউটিউব এনালিটিক্স বুঝুন

ইউটিউব ভিডিওর ভিউ বৃদ্ধি করার জন্য আমাদের শেষ স্টেপ বা উপায়টি হল ইউটিউব এনালিটিক্স বোঝা।

আপনি ইউটিউব এনালিটিক্স থেকে বুছতে পারবেন যে কোন ভিডিও বা কোন ভিডিও টপিকের ওপর বেশি ভিউস আসছে।

কোন দিন ও কোন সময়ে আপনার ভিডিওতে বেশি ভিউস আসছে এবং আপনার ভিডিও গুলি ভিয়ার্সরা কিভাবে খুঁজে পাচ্ছে।

আপনি ইউটিউব এনালিটিক্স বুঝে সেরকম ভাবে ভিডিও তৈরী ও আপলোড করলে আপনার ভিডিও রেঙ্ক করতে সুবিধা হবে।

ইউটিউব এনালিটিক্স একটি গুরুত্বপূর্ণ টুল এরকম বহু ইউটিউবার আছে যারা এটি ব্যবহার করে না। কিন্তু আপনি কখনোই এই ভুলটি করবেন না।

ইউটিউব এনালিটিক্স বোঝার চেষ্টা করুন তার পর নিজে থেকেই বুছতে পারবেন যে একটি চ্যানেলকে গ্রো করতে সত্যিই এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ টুল।

আমাদের শেষ কথা:

তো বন্ধুরা আজকে আমরা জানলাম যে ঠিক কোন কোন বিষয়গুলি আমরা সঠিক ভাবে অনুসরণ করলে আমাদের ইউটিউব ভিডিওর ভিউস বৃদ্ধি করতে পারবো।

আপনি যদি ওপরের আলোচিত সমস্ত বিষয়গুলি সঠিক ভাবে অনুসরণ করে চলেন তাহলে অবশ্যই আপনি তফাৎ বুছতে পারবেন।

চেষ্টা করবো ভবিষ্যতে ইউটিউবের ওপর আরো কিছু পোস্ট যেরকম ইউটিউব ভিডিও এসইও নিয়ে আর্টিকেল নিয়ে আসার জন্য।

আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকলে ও পোস্ট সংক্রান্ত কোনো প্রশ্ন থেকে থাকলে অবশ্যই আমায় কমেন্ট করে জানাতে পারেন।