হোস্টিং কেনার আগে যে বিষয়গুলি অবশ্যই লক্ষ্য রাখবেন

আমরা জানি যে একটি ওয়েবসাইট বা ব্লগ সাইট তৈরি করার জন্য ডোমেইন কেনার সাথে সাথে একটি ওয়েব হোস্টিং অবশ্যই প্রয়োজন।

তাই আমাদের এই দুটি প্রাথমিক জিনিস অবশ্যই ক্রয় করতে হয় একটি ওয়েবসাইট বা ব্লগ সাইট তৈরি করার জন্য।

কিন্তু হোস্টিং কেনার পূর্বে এরকম বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থাকে যা আমাদের অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে বা বিবেচনা করতে হবে।

কারণ একটি সঠিক হোস্টিং বেছে নিতে পারলে তা আপনার ওয়েবসাইট বা ব্লগ সাইটটিকে বড় হয়ে উঠতে অনেক সাহায্য করবে।

আর অন্য দিকে আপনি সঠিক হোস্টিং সিলেক্ট করতে ব্যর্থ হলে তা আপনার ওয়েবসাইট বা ব্লগ সাইটে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে।

তাই আজকে আমরা জানবো ওয়েব হোস্টিং কেনার আগে আমাদের কোন বিষয়গুলি অবশ্যই লক্ষ্য রাখা উচিত।

হোস্টিং কি?

হোস্টিং বা ওয়েব হোস্টিং হল এমন একটি ইন্টারনেট সার্ভিস যার মাধ্যমে আমরা আমাদের ওয়েবসাইট বা ব্লগ সাইট পরিচালনা করতে পারি।

যেই হোস্টিং প্রোভাইডারের কাছ থেকে আমরা হোস্টিং ক্রয় করে থাকি তারা আমাদের একটি সার্ভার প্রদান করে যাকে কম্পিউটার বলা হয়।

এবং এই ওয়েব সার্ভার বা কম্পিউটারে স্টোরেজ থাকে যেখানে আমরা আমাদের সাইটের সমস্ত ফাইল স্টোর করে রাখতে পারি।

বিভিন্ন প্রকারের হোস্টিং

যদিও ওয়েব হোস্টিং বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে কিন্তু এখানে আমি শুধু জনপ্রিয় কিছু হোস্টিংগুলির নামই তুলে ধরছি।

  • Shared Web Hosting
  • VPS Hosting বা Virtual Dedicated Server
  • Dedicated Server Hosting
  • Cloud Hosting
  • Managed WordPress Hosting
  • Reseller Web Hosting

তো চলুন এবার আমরা জেনেনি হোস্টিং কেনার আগে আমাদের কোন কোন বিষয়গুলি অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।

হোস্টিং কেনার পূর্বে যে বিষয়গুলি অবশ্যই লক্ষ্য রাখবেন

একটি ব্লগ সাইটের জন্য হোস্টিং কেনার সময় যেসব ছোট বড় সমস্ত বিষয়গুলি ধ্যান দিতে হবে সেগুলি হল:

১. প্রয়োজনীয়তা জানুন

সবার প্রথমে আপনাকে নিজের প্রয়োজনীয়তা বা উদেশ্য জানতে হবে, যে ঠিক কেন এবং কোন ধরণের ব্লগ সাইট আপনি তৈরী করতে চান।

আপনার ও আপনার ব্লগ সাইটের উদ্দেশ্য সিদ্ধ করার জন্য ঠিক কোন কোন ফিচারস বা টুল প্রয়োজন পরবে তার প্রয়োজনীয়তা আপনাকে বুছতে হবে।

কারণ আপনি যত ভালো ভাবে এই বিষয়গুলি বুছতে পারবেন আপনার সঠিক ওয়েব হোস্টিং নির্বাচন করতে তত সুবিধা হবে।

২. সার্ভার আপটাইম

কোনো হোস্টিং প্রোভাইডারের কাছ থেকে হোস্টিং নেওয়ার সময় যেই জিনিসটির প্রতি অধিক গুরুত্ব দিতে হবে তা হল সার্ভার আপটাইম।

হোস্টিং সার্ভারের জন্য এটি সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ যাতে সে আপনার ওয়েবসাইট বা ব্লগ সাইটিকে ইন্টারনেটে ২৪ ঘন্টা লাইভ ও একটিভ রাখে।

কারণ আপনি কখনই চাইবেন না যে আপনার সাইটটি এক মিনিটের জন্যে হলেও ইন্টারনেট থেকে ইনএক্টিভ বা ডাউন হয়ে যায় যাক।

তাই এই বিষয়টির ওপর অবশ্যই গুরুত্ব দেবেন এবং সেই প্রোভাইডারের কাছ থেকেই হোস্টিং নেবেন যাদের সার্ভার এবং নেটওয়ার্ড স্টেবিলিটি ভালো।

অবশ্যই পরামর্শ দেবো এরকম কোনো প্রোভাইডারের কাছ থেকে হোস্টিং নিতে যার ৯৯.৫% এবং এর অধিক সার্ভার আপটাইম আছে।

৩. ব্যান্ডউইথ লিমিট

ব্যান্ডউইথ হল হোস্টিং সার্ভার দ্বারা প্রদান করা নির্দিষ্ট মাসিক ডেটা যা একটি ওয়েবসাইট তার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দর্শকদের কাছে সরবরাহ করতে পারে।

একটি ওয়েবসাইট বা ব্লগ সাইটের জন্য কত পরিমান ব্যান্ডউইথ প্রয়োজন তা সেই সাইটের পেজের সাইজ ও সাইট ট্রাফিকের ওপর নির্ভর করে।

তাই হোস্টিং কেনার সময় এই বিষয়টির দিকেও একটু নজর রাখবেন এবং ১০ জিবি বা তার বেশি ব্যান্ডউইথ প্রদান করে।

এরকম কোনো হোস্টিং প্রোভাইডারের কাছ থেকেই ওয়েব হোস্টিং ক্রয় করুন।

৪. ওয়েব স্পেস বা হোস্টিং স্টোরেজ

এটি হল ওয়েব সার্ভারের হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ বা স্টোরেজ যেখানে আপনি আপনার ওয়েবসাইটের সমস্ত ফাইল স্টোর করে রাখেন।

হোস্টিং স্টোরেজের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখবেন কম করে ১০ জিবি স্টোরেজ প্রদান করছে কিনা এবং HDD নাকি SSD স্টোরেজ অফার করছে।

অবশ্যই SSD স্টোরেজের সাথে যাওয়ার চেষ্টা করুন কারণ SSD অনেক ক্ষমতাশীল এবং দ্রুত ফাইল ট্রান্সফারে সক্ষম।

তাই এতে আপনার ওয়েবসাইটের পারফরমেন্স এবং স্পিড দুটিই ভালো হবে।

৫. ডোমেইন এবং ইমেইল ব্যবহারের সীমা

হোস্টিং কেনার সময় অবশ্যই এই বিষয়টিতে নজর দিন যে আপনি তার মধ্যে কতগুলি ডোমেইন এবং ইমেইল একাউন্ট ব্যবহার করতে পারবেন।

এরকম অনেক হোস্টিং প্রোভাইডার আছে যারা তাদের হোস্টিং প্ল্যান অনুযায়ী একটি বা সীমিত ডোমেইন এবং ইমেইল একাউন্ট ব্যবহারের অনুমতি দেয়।

তাই হতে পারে ভবিষ্যতে আপনি আরো একটি ব্লগ সাইট তৈরী করতে চান তাই সেই বিষয়টির ওপর পরিকল্পনা করে হোস্টিং ক্রয় করুন।

৬. কাস্টমার সাপোর্ট

হোস্টিং কেনার আগে আরেকটি যে অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির ওপর নজর রাখতে হবে তা হল যেই প্রোভাইডারের কাছ থেকে হোস্টিং ক্রয় করতে চাইছেন তাদের কাস্টমার সাপোর্ট কিরকম।

আপনার হোস্টিং ও ওয়েবসাইটে যদি কোনো রকমের সমস্যা হয় সেই ক্ষেত্রে কাস্টমার সাপোর্টের দরকার অবশ্যই পরবে।

আর এই সময় তাদের সাপোর্ট যদি সহজলভ্য না হয় বা সাপোর্ট পেতে বেশি সময় লাগে তাহলে আপনার সাইট বেশ কিছু সময়ের জন্য ডাউন হয়ে যাবে এবং অনেক ভিসিটর্স হারাবেন।

তাই যেখান থেকে হোস্টিং নেবেন তাদের কাস্টমার সাপোর্ট যাতে ২৪ ঘন্টা পাওয়া যায় সেই বিষয়টিতে অধিক গুরুত্ব দেবেন।

৭. মানি ব্যাক গ্যারেন্টি বা রিফান্ড পলিসি

হোস্টিং কেনার সময় মানি ব্যাক পলিসি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই ক্ষেত্রে আপনি কোনো প্রোভাইডারের হোস্টিং প্ল্যান ব্যবহার করে সন্তুষ্টি না পেলে তারা আপনার টাকা ফেরত করে দেবে।

প্রায় সমস্ত জনপ্রিয় হোস্টিং প্রোভাইডার এই সার্ভিস প্রদান করে থাকে আর যা আপনার জন্য একটি ভালো সুযোগ হতে পারে সঠিক হোস্টিং ও প্রোভাইডার নির্বাচনের জন্য।

কারণ তাদের সার্ভিস পছন্দ না হলে আপনি আপনার টাকা ফেরতের আবেদন করতে পারেন।

৮. সাইন আপ এবং রিনিউয়াল খরচ

যখন আমরা নতুন কোনো হোস্টিং প্রোভাইডারের কাছ থেকে হোস্টিং নিয়ে থাকে সেই সময় প্রথমবার হোস্টিং ক্রয় করার জন্য অনেক কম দাম নিয়ে থাকে।

কিন্তু নির্দিষ্ট সময়সীমা শেষের পর যখন হোস্টিং রিনিউয়াল করার সময় আসে তখন যেই দামে হোস্টিং ক্রয় করা হয়েছিলো ঠিক তার দু-তিন গুন্ বেশি দাম ধার্য করা হয়।

তাই কম দামে হোস্টিং প্রদান করছে এরকম ফাঁদে পরার আগে তার সাইন উপ এবং রিনিউয়াল কস্ট অবশ্যই জেনে নেবেন।

৯. হোস্টিং প্ল্যান আপগ্রেড

যখন আপনার ব্লগ সাইট বা ওয়েবসাইটটি জনপ্রিয়তা পাবে তখন আপনি হয়তো চেষ্টা করবেন যে আরো একটু উচ্চ মানের হোস্টিং প্ল্যান নিতে।

তাই ভবিষ্যতে হোস্টিং প্ল্যান আপগ্রেডের কথা ভেবে অবশ্যই জেনে নেবেন যে তা করা সম্ভব হবে কিনা।

যদিও এখন প্রায় সমস্ত হোস্টিং প্রোভাইডার এই সুযোগ দিয়ে থাকে তাও একবার বিষয়টি জানার চেষ্টা অবশ্যই করবেন।

১০. জনপ্রিয় ও বিশ্বাসযোগ্য হোস্টিং সাইট

হোস্টিং কেনার জন্য সর্বদাই কোনো জনপ্রিয় ও বিশ্বাসযোগ্য হোস্টিং সাইট থেকে হোস্টিং ক্রয় করবেন।

কারণ একটি জনপ্রিয় ও বিশ্বাসযোগ্য সাইট থেকে হোস্টিং নিলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ওপরের আলোচিত বিষয়গুলি সমস্তই আপনি পেয়ে যাবেন।

এবং কখনই এরকম কোনো হোস্টিং সাইটের ফাঁদে পরবেন না যারা কম দামে ভালো হোস্টিং দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে।

কারণ তাদের হোস্টিং কখনোই ভালো হয়না, বেশিরভাগ সময় সার্ভার ডাউন থাকে, সার্ভার পারফরম্যান্স ও গতি ধীর এবং খারাপ হয়।

১১. হোস্টিং কেনার আগে অনলাইন রিসার্চ করুন

হোস্টিং কেনার পূর্বে যতটা সম্ভব ভালো ভাবে হোস্টিং প্ল্যান ও প্রোভাইডার সম্পর্কে প্রতিটি জিনিস ভালো ভাবে অনলাইন রিসার্চ করেনিন।

আপনি অনলাইন রিভিউ থেকে খুব সহজেই জানতে পারবেন কোন হোস্টিং প্ল্যান ও প্রোভাইডার আপনার জন্য ভালো ও বিশ্বাসযোগ্য হবে।

আমাদের শেষকথা:

হোস্টিং কেনার সময় সাধারণত এই সমস্ত বিষয়গুলি যদি আপনি মাথায় রাখেন তাহলে কখনোই সঠিক হোস্টিং নির্বাচনে ভুল হবেন না।

আশা করছি যে আপনাদের যথোপুযুক্ত উত্তর দিতে পেরেছি এবং এরপর আপনাদের সঠিক হোস্টিং নির্বাচনের আর সমস্যা হবে না।

তো বন্ধুরা আপনাদের এই আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই শেয়ার করুন এবং আমায় কমেন্ট করে জানান।

আর আপনাদের এই আর্টিকেল বা বিষয় নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে তাও আমায় কমেন্ট করে জানাতে পারেন।