ডোমেইন কেনার আগে যে বিষয়গুলি আপনার জানা প্রয়োজন

আমরা জানি যে একটি ব্লগ সাইট শুরু করতে গেলে প্রাথমিক যে জিনিস গুলি প্রয়োজন হয় তা হল একটি হোস্টিং, ডোমেইন এবং সাইট থিম।

যেরকম একটি হোস্টিং কেনার আগে আমাদের উদেশ্য এবং বিভিন্ন বিষয়ের দিকে লক্ষ রেখে একটি হোস্টিং ক্রয় করতে হয়।

সেরকমই ডোমেইনের ক্ষেত্রেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থাকে যা আমাদের একটি ডোমেইন কেনার পূর্বে অবশ্যই বিবেচনা বা লক্ষ রাখা উচিত।

তো আজকে আমরা এরকমই কিছু বিষয় ও দিক আলোচনা করবো যা একটি ডোমেইন কেনার পূর্বে আমাদের জানা প্রয়োজন।

আপনি যদি একটি ব্লগ সাইট তৈরির জন্য প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন তাহলে ডোমেইন নেওয়ার পূর্বে অবশ্যই এই বিষয়গুলি জেনেনি।

আমরা আমাদের মূল বিষয় নিয়ে আলোচনার পূর্বে অবশ্যই ডোমেইন সম্পর্কে অল্প একটু জেনে নেবো।

আপনি যদি ডোমেইন সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানতে চান তাহলে নিচের লিংকটি ক্লিক করে আমার আগের আর্টিকেল পড়তে পারেন।

ডোমেইন কি?

ডোমেইন নাম হল কোনো ওয়েবসাইট বা ব্লগ সাইটের এড্রেস যা বিভিন্ন লোক তাদের ব্রাউসার URL বারে লিখে সার্চ করে কোনো সাইটে প্রবেশ করার জন্য।

সহজ ভাবে বললে আপনার ব্লগ সাইটটি যদি একটি বাড়ি হয়ে থাকে তাহলে ডোমেইন নাম হলো আপনার ওই বাড়ির ঠিকানা বা এড্রেস।

সাব-ডোমেইন কি?

সাব-ডোমেইন হল ডোমেইন এরই একটি অংশ বা একটি চাইল্ড ডোমেইন যা আপনার মেইন ডোমেইনের অধীনে থাকে।

এটি ব্যবহার করা হয় একটি ওয়েবসাইটের অধীনে আরেকটি চাইল্ড সাইট তৈরির ক্ষেত্রে যেরকম মেইন ডোমেইন যদি mysite.com হয় তাহলে তার সাব-ডোমেইন হতে পারে blog.mysite.com

ডোমেইন নাম এবং হোস্টিংয়ের মধ্যে পার্থক্য কি?

ডোমেইন নাম যদি আপনার ওয়েবসাইট বা ব্লগ সাইটের এড্রেস হয়ে থাকে তাহলে হোস্টিং হল আপনার সেই বাড়ি যেখানে আপনার ব্লগ সাইটটি থাকে।

হোস্টিং হল সেই কম্পিউটার যেখানে আপনি আপনার ব্লগ বা ওয়েবসাইটের সমস্ত ফাইল এবং ডেটা স্টোর করে রাখেন।

এই কম্পিউটারগুলিকে সার্ভার বলা হয় যা হোস্টিং প্রোভাইডাররা প্রদান করে থাকে। অবশ্যই মনে রাখবেন যে একটি ওয়েবসাইট তৈরির জন্য ডোমেইন এবং হোস্টিং দুটিই প্রয়োজন।

বিভিন্ন প্রকারের ডোমেইন এক্সটেনশন

আমরা জানি যে ডোমেইন নাম বিভিন্ন ধরনের বা এক্সটেনশনের হয়ে থাকে তবে তাদের মধ্যে সব থেকে জনপ্রিয় হল .com

এছাড়া অন্যান্য ডোমেইন এক্সটেনশন গুলি হল .net, .in, .info, .org, .co ইত্যাদি। তবে এদের নামের বা এক্সটেনশনার বিভিন্নতার সাথে সাথে এদের কাজ এবং সুবিধাও ভিন্ন হয়।

তো চলুন জেনেনি ডোমেইনের প্রকারগুলি।

১. টপ লেভেল ডোমেইন (Top Level Domain) – TLD

টপ লেভেল ডোমেইন বা TLD হল সেই সমস্ত ডোমেইন নাম যাদের ইন্টানেটের DNS স্ট্রাকচারের একদম শীর্ষে রাখা হয়েছে।

TLD ডোমেইন গুলি হল .gov, .edu, .com, .mil, .org, এবং .net

২. কান্ট্রি কোড টপ লেভেল ডোমেইন (Country Code Top Level Domain) – ccTLD

ccTLD বা কান্ট্রি কোড টপ লেভেল ডোমেইন হল নির্দিষ্ট দেশের নাম ভিত্তিক টপ লেভেল ডোমেইন। যেরকম .uk ইউনাইটেড কিংডম এর জন্য, .de. জার্মানি এবং .in ভারতের জন্য।

ccTLD সেই সমস্ত ওয়েবসাইট গুলির নামের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় যারা নির্দিষ্ট কোনো দেশের অডিয়েন্সকে টার্গেট করতে চায়।

৩. জেনেরিক টপ লেভেল ডোমেইন (Generic Top Level Domain) – gTLD

gTLD হল টপ লেভেল ডোমেইন এরই একটি বিভাগ যেখানে .com, .net, .org এবং .info এরমত ডোমেইন নাম গুলিকে যুক্ত কর হয়েছে।

৪. ইন্টারন্যাশনালইজড কান্ট্রি কোড টপ লেভেল ডোমেইন – IDN ccTLD

এটি সেই সমস্ত স্পেশাল এনকোডেড ফরমেট টপ লেভেল ডোমেইন যা নন ল্যাটিন বা স্পেশাল ক্যারেক্টার দেখানোর বা ব্যবহারের অনুমতি দেয়।

ডোমেইন কেনার আগে যে বিষয়গুলি লক্ষ্য রাখবেন

চলুন এবার জেনেনি একটি ডোমেইন কেনার আগে আমাদের ঠিক কোন কোন বিষয়গুলি অবশ্যই লক্ষ্য রাখা উচিত।

১. ডোমেইন নামের উপস্থিতি চেক করুন

ডোমেইন নেওয়ার আগে সবার প্রথমে আপনাকে অবশ্যই চেক করে দেখতে হবে যেই ডোমেইনটি আপনি নিতে চাইছেন তা এভিলেবেল আছে কিনা।

অর্থাৎ যেই ডোমেইন নামটি আপনি ঠিক করেছেন আপনার ওয়েবসাইট এড্রেস হিসাবে ব্যবহার করবেন তা আগে থেকেই কেউ ব্যবহার করছে কিনা।

কারণ কেউ যদি আগে থেকেই ওই একই ডোমেইন নাম রেজিস্টার করে রাখে সেই ক্ষেত্রে আপনি আর ওই ডোমেইনটি কিনতে পারবেন না।

তাই ডোমেইন কেনার আগে একটির বেশি ডোমেইন নাম বেছে রাখুন এবং তা ইন্টারনেটে চেক করুন উপস্থিত আছে কিনা।

২. ছোটো এবং যাতে সহজে মনে রাখা যায়

একটি ডোমেইন নাম ঠিক করার সময় চেষ্টা করুন যাতে ডোমেইন নামটি অল্প সংখ্যার হয় (১০-১৫টি) তার সাথে সহজে যাতে মনেও রাখা যায়।

কারণ আপনার সাইট এড্রেসটি যদি বড় এবং সহজে স্বরণযোগ্য না হয় সেই ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীরা সরাসরি আপনার সাইটে প্রবেশ করতে পারবে না।

কারণ কোনো বড় এবং জটিল ডোমেইন নাম মনে রাখা যায় না। তাই ডোমেইন নামটি ছোটো এবং সহজে মনে রাখা যায় এরকম হয় উচিত।

৩. ইউনিক হাওয়া উচিত

আপনার ডোমেইনটি ছোটো এবং সহজে স্বরণযোগ্য হওয়ার সাথে সাথে ইউনিক হওয়াও দরকার।

কারণ আপনার ডোমেইন নামটি আপনার একটি ব্র্যান্ড নাম হিসাবে পরিচিত হবে তাই অবশ্যই এটি ইউনিক এবং অন্যদের থেকে আলাদা হাওয়া প্রয়োজন।

তাই অন্য সাইটের অনুরূপ ডোমেইন নাম কখনোই সিলেক্ট করবেন না। শুধু তাই না একই ডোমেইন নামের ক্ষেত্রে সার্চ ইঞ্জিনেও সমস্যা সৃষ্টি করে।

এইজন্য অবশ্যই একটি পৃথক ও ইউনিক নাম ভাবুন।

৪. আপনার সাইট Niche বা টপিককে যেন সূচিত করে

ডোমেইন সিলেক্ট করার ক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল যাতে আপনার সাইটের নাম আপনার সাইটের বিষয় বা Niche কে সূচিত করে।

অর্থাৎ ডোমেইন নাম এরকম হাওয়া উচিত যাতে নাম দেখেই বোঝা যায় আপনার সাইটটি কোন বিষয়ের ওপরে বা আপনার সাইটে কোন ধরণের কনটেন্ট পাওয়া যেতে পারে।

তাই অবশ্যই খেয়াল রাখবেন যাতে আপনার ডোমেইন নামটি আপনার ব্লগ সাইটের Niche বা বিষয়কে সূচিত করে।

৫. ডোমেইন নামের সাথে কিওয়ার্ড ব্যবহার করুন

অনেকেই এই বিষয়টি জানেনা যে তারা ডোমেইন নাম ঠিক করার সময় তার সাইটের Niche অনুযায়ী ডোমেইন নামে কীওয়ার্ড ব্যবহার করলে On Page SEO তে ইম্প্রোভ হয়।

একটি ব্লগ সাইটে বেশি ট্রাফিক আনতে Off Page SEO এর সাথে সাথে On Page SEO অনেক বড় ভূমিকা পালন করে।

তাই ডোমেইন নাম কেনার আগে অবশ্যই আপনার ডোমেইন নামে কীওয়ার্ড ব্যবহার করুন আপনার সাইটের অন পেজ এসইও কে ইম্প্রোভ করতে।

৬. হাইফেন এবং নম্বর ব্যবহার করবেন না

যদিও ডোমেইন নামে হাইফেন বা নম্বর ব্যবহার করলে তা পড়তে সহজ হয় এবং দেখতে ভালো লাগে কিন্তু তা কখনোই ব্যবহার করবেন না।

কারণ ডোমেইন নামে হাইফেন বা নম্বর ব্যাবহার করলে তা হয়তো পড়তে সহজ লাগে কিন্তু লিখতে না। তাই হাইফেন বা নম্বর ব্যবহার করবেন না।

শুধু তাই না আপনি ডোমেইন নামের সাথে এরকম কোনো স্পেশাল ক্যারেক্টার ব্যবহার করলে আপনার সাইটটি স্প্যামি দেখাবে।

আর এরকম কোনো স্প্যামি সাইট গুগল সহ অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিন কখনোই আপনার সাইটটিকে সবার কাছে তুলে ধরবেনা।

৭. ট্রেড মার্ক চেক করুন

ডোমেইন নাম কেনার আগে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল আপনার ডোমেইন নামটি ট্রেড মার্ক হিসাবে রেজিস্টার আছে কিনা চেক করা।

কারণ আপনার ডোমেইন নামটি যদি ট্রেড মার্ক করা থাকে এবং ভুল বসত আপনি না জেনে ওই একই নামের ডোমেইনটি কেনেন।

তাহলে আপনার সাইটিকে সার্চ ইঞ্জিনে থেকে রিমুভ করে দেওয়া হবে। তাই ডোমেইন নাম নির্বাচনের পূর্বে ট্রেড মার্ক চেক করা অবশ্যই জরুরি।

কোনো ডোমেইন নামের ট্রেড মার্ক চেক করতে এখনে ক্লিক করুন

৮. TLD বা টপ লেভেল ডোমেইন সিলেক্ট করুন

ডোমেইন নাম সিলেক্টের ক্ষেত্রে অবশ্যই একটি টপ লেভেল ডোমেইন সিলেক্ট করুন। তবে প্রশ্ন হল কোন TLD এক্সটেনশনটি নেওয়া উচিত ?

কারণ TLD অথবা টপ লেভেল ডোমেইনের যে সমস্ত এক্সটেনশনগুলি আছে তাদের উদেশ্য গুলিও আলাদা থাকে। যেরকম:

  • .com – কমার্শিয়াল বিসনেস ওয়েবসাইট গুলির ক্ষেত্রে।
  • .edu – এডুকেশনাল সংস্থা সাইট গুলির ক্ষেত্রে।
  • .org – কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা গুলির জন্য।
  • .net – নেটওয়ার্ক সংস্থা বা ইন্টারনেট প্রোভাইডার সাথে জড়িত সংস্থার ক্ষেত্রে।
  • .gov – গভার্মেন্ট বা সরকারি সংস্থার সাথে জড়িত।
  • .info – কোনো তথ্য বা ইনফোরমেটিভ সাইটের জন্য।
  • .mil – মিলিটারি বা সেনাবাহিনী ক্ষেত্রের সাইটগুলির জন্য।

বেক্তিগত ভাবে পরামর্শ দেবো .com নেওয়ার জন্য কারণ এটি সব থেকে জনপ্রিয় এবং বহুল ব্যাবহৃত gTLD ডোমেইন।

৯. জনপ্রিয় এবং বিশ্বাসযোগ্য ডোমেইন প্রোভাইডার

ডোমেইন শুধু মাত্র সেই সব ডোমেইন প্রোভাইডার গুলির কাছ থেকেই কিনুন যারা জনপ্রিয়, বিশ্বাসযোগ্য এবং যাদের কাস্টমার সাপোর্ট ভালো।

কারণ কোনো জনপ্রিয় এবং বিশ্বাসযোগ্য ডোমেইন প্রোভাইডার কখনোই তাদের কাস্টমারদের ঠকাবে না এবং পার্সোনাল ইনফরমেশন লিক করবে না।

এবং ভালো এবং ২৪ ঘন্টা লভ্য কাস্টমার সার্ভিস, ডোমেইন সংক্রান্ত কোনো অসুবিধা থেকে সহজে ও তৎক্ষণাৎ সমাধান দেবে।

তাই ডোমেইন নাম কেনার জন্য কোনো জনপ্রিয় এবং বিশ্বাসযোগ্য ডোমেইন প্রোভাইডারের কাছ থেকে ডোমেইন কিনুন।

১০. ডোমেইন ট্রান্সফার ফেসিলিটি

আপনি একটি ডোমেইন প্রোভাইডারের থেকে আপনার ডোমেইনটি অন্য একটি প্রোভাইডারের মধ্যে ট্রান্সফার করতে পারেন।

তবে সমস্ত ডোমেইন প্রোভাইডার এই ফ্যাসিলিটি প্রদান করে না। অর্থাৎ এই ক্ষেত্রে আপনি চাইলেও আপনার ডোমেইনটি ট্রান্সফার করতে পারবেন না।

তাই ভবিষ্যতে এরকম কিছু সমস্যা এড়াতে ডোমেইন ট্রান্সফার ফেসিলিটি দিচ্ছে এরকম প্রোভাইডারের কাছ থেকে ডোমেইন কিনুন।

১১. ফ্রি SSL Certificate

আমার অনেকেই জানিনা যে SSL সার্টিফিকেট কি তাই কখনই এই বিষয় নিয়ে মাথাও ঘামাই না এবং আমাদের সাইটে তা ইনস্টলও করিনা।

তাহলে জেনে রাখুন SSL Certificate হল একটি ডিজিটাল সার্টিফিকেট যার মধ্যে একটি ক্রিপ্টোগ্রাফিক কি থাকে যেটি আপনার সাইটের সমস্ত ডেটাকে সুরক্ষা করে।

এটি আপনার সাইটে ইনস্টল থাকলে আপনার সাইট ব্যবহার কারীদের সাথে ওয়েব সার্ভারের মধ্যে একটি সুরক্ষিত কানেকশন থাকে।

যা ব্যবহার কারীদের বিভিন্ন ডেটা যেরকম ক্রেডিট কার্ড লেনদেন, ইউসার লগইন তথ্য এবং ডেটা ট্রান্সফার এগুলি সুরক্ষিত ভাবে হয়।

শুধু তাই না SSL সার্টিফিকেট ইউসার দের সাইটের প্রতি বিশ্বাস বাড়ানোর সাথে সাথে গুগল রেঙ্কিংয়েও সাহায্য করে।

এরকম অনেক জনপ্রিয় ডোমেইন প্রোভাইডার আছে যারা ডোমেইন নামের সাথে ফ্রি SSL সার্টিফিকেট প্রদান করে।

তাই এই বিষয়টি মাথায় রেখে আপনি ডোমেইন নিতে পারেন।

আমাদের শেষ কথা:

আমি বেক্তিগত ভাবে মনে করি যে ওপরের আলোচিত বিষয়গুলি একটি ডোমেইন কেনার পূর্বে অবশ্যই মাথায় রাখা উচিত।

বিশেষ করে যারা নতুন ব্লগ শুরু করতে চায় তাদের, কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই সমস্ত বিষয় গুলি জানা থাকেনা তার ফলে তারা বিভিন্ন সমস্যায় পরে।

আশা করছি যে এই আর্টিকেল থেকে নতুন সহ অন্যান্য ব্লগারাও কিছুটা হক উপকৃত হবে।

আপনাদের যদি আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আমায় কমেন্ট করে জানান। যদি এই পোস্ট সংক্রান্ত কোনো প্রশ্ন থাকে তাহলেও কমেন্টে আমায় জানাতে পারেন।