দ্রুত গুগল এডসেন্স এপ্রুভাল পাওয়ার সঠিক উপায় ২০২২

একটি ব্লগ সাইট থেকে আয় বা ইনকাম করার সব থেকে জনপ্রিয় ও দ্রুত প্রাথমিক উপায় হল গুগল এডসেন্স একাউন্ট।

আমরা জানি যে অ্যাডসেন্সর মাধ্যমে আমাদের ব্লগ সাইটের বিভিন্ন পেজে অ্যাড বা বিজ্ঞাপন দেখিয়ে টাকা আয় করতে পারি।

কিন্তু আপনি আপনার ব্লগ সাইটে তখনই অ্যাড দেখিয়ে আয় করতে পারবেন যখন গুগল এডসেন্স আপনার সাইটে তা অনুমোদন দেবে।

অর্থাৎ সবার প্রথমে অবশ্যই আপনাকে একটি গুগল এডসেন্স একাউন্ট তৈরী করতে হবে এবং আপনার ব্লগ সাইটে তা ব্যবহার করার জন্য আবেদন করতে হবে।

আবেদনের পর যখন এডসেন্স আপনার সাইটটি রিভিউ করে দেখবে যে আপনার সাইটটি তাদের পরিষেবা চালানোর জন্য তাদের সমস্ত নীতি ও শর্তাবলী অনুসরণ করছে।

তখন তারা আপনার ব্লগ সাইটে এডসেন্স ব্যবহারের আবেদনে অনুমোদন দেবে এবং আপনার সাইটটি এডসেন্স পরিষেবার জন্য তৈরী হয়ে যাবে।

তো আজকে আমরা জানবো সেই সমস্ত নীতি ও শর্তাবলী গুলি যা সঠিক ভাবে অনুসরণ করলে দ্রুত গুগল এডসেন্স এপ্রুভাল পাওয়া যাবে।

তো চলুন আর বেশি দেরি না করে আমরা জেনেনি এডসেন্স এপ্রুভাল পাওয়ার সঠিক উপায় গুলি।

গুগল এডসেন্স কি?

এডসেন্স হল গুগলের একটি পরিষেবা যেখানে গুগল নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত ওয়েবসাইটের প্রকাশকরা ফটো, টেক্সট ও ভিডিও মাধ্যমে বিভিন্ন বিজ্ঞাপনগুলি সাইটের কনটেন্ট ও ভিসিটরদের লক্ষ্য করে পদর্শন করে।

অর্থাৎ এটি হল একটি অনলাইন অ্যাড পরিষেবা যা গুগল দ্বারা পরিচালিত হয় এবং বিভিন্ন প্রকাশকরা নির্দিষ্ট ভিসিটর ও ওয়েবসাইটের কনটেন্টকে লক্ষ্য করে অ্যাডগুলিকে প্রকাশ করে থাকে।

সহজে এডসেন্স অনুমোদন পাওয়ার সঠিক উপায়গুলি হল

আপনার সাইটে গুগল এডসেন্স এপ্রুভাল পেতে অবশ্যই আপনাকে এডসেন্স পলিসি ও অন্যান্য কিছু বিষয় লক্ষ্য রাখতে ও অনুসরণ করতে হবে।

তা নাহলে কখনোই আপনি আপনার ব্লগ সাইটে এডসেন্স ব্যবহারের জন্য অনুমোদন পাবেন না।

তাই নিচের প্রতিটি বিষয় ভালো ভাবে পড়ুন ও দেখুন যাতে আপনার সাইটটি সেই সমস্ত বিষয়গুলি অনুসরণ করছে কিনা।

দ্রুত এডসেন্স এপ্রুভাল পেতে বা এডসেন্স আবেদনের আগে আমাদের যে বিষয়গুলি লক্ষ্য রাখতে হবে সেগুলি হল:

১. টপ লেভেল ডোমেইন

একটি ডোমেইন কেনার সময় আমরা অনেকেই খেয়াল রাখিনা যে যেই ডোমেইনটি নিচ্ছি তা টপ লেভেল ডোমেইনের মধ্যে পড়ছে কিনা।

কারণ এডসেন্স এই বিষয়টি দেখে যে আপনি একটি TLD বা টপ লেভেল ডোমেইন ব্যবহার করছেন নাকি অন্য কোনো ডোমেইন।

আপনি যদি TLD ছাড়া অন্ন কোনো ডোমেইন এক্সটেনশন বা ফ্রি ডোমেইন ব্যবহার করে থাকেন তাহলে আপনার অনুমোদন পেতে দেরি হবে।

এবং কখনো কখনো হতে পারে যে টপ লেভেল ডোমেইন বা TLD এক্সটেনশন না হওয়ায় তারা এডসেন্স অনুমোদন প্রত্যাখ্যান করেছে।

তাই ব্লগ সাইট তৈরী করার আগেই এই বিষয়টি খেয়াল রাখুন। TLD বা টপ লেভেল ডোমেইন এক্সটেনশন গুলি হল:

  • .com
  • .net
  • .org
  • .info
  • .xyz
  • .in (India ccTLD)
  • .com.bd (bangladesh ccTLD)

২. দ্রুত লোডিং স্পিড ও রেস্পন্সিভ থিম

অবশ্যই খেয়াল রাখবেন যাতে আপনার ব্লগ সাইটের লোডিং স্পিড দ্রুত হয়। কারণ একটি ধীর লোডিং স্পিড সাইটকে এডসেন্স অনুমোদন দেয় না।

তার সাথে সাথে আপনার ব্লগ সাইটের থিমটিকে রেস্পন্সিভ বা সমস্ত ডিভাইসে ব্যবহার যোগ্যও হতে হবে।

একটি সাইট যদি স্লো বা ধীর হয় তার সাথে তা মোবাইল সহ অন্যান্য ডিভাইসে ব্যবহারযোগ্য না হয় সেই সাইটে কখনোই বেশি ভিসিটর্স আসেনা।

এডসেন্স যদি দেখে যে সাইটে সঠিক ভাবে ভিসিটর্স আসবেনা অর্থাৎ আল্টিমেটলি যেখান থেকে তাদের কোনো মুনাফাই হবে না।

সেই সাইটকে গুগল তাদের এডসেন্স পরিষেবা ব্যবহার করার জন্য অনুমোদন দেবে না।

তাই অবশ্যই এই বিষয়টি লক্ষ্য রাখুন এবং আপনার সাইট যদি দ্রুত লোডিং না হয় তাহলে অবশ্যই তা ইম্প্রোভ করার চেষ্টা করুন।

৩. পরিষ্কার থিম এবং সঠিক নেভিগেশন মেনু

অনেকেই এই বিষয়টি লক্ষ্য রাখে না এবং এড়িয়ে চলে কিন্তু একটি ওয়েবসাইট বা ব্লগ সাইটের পরিষ্কার থিম ও সঠিক নেভিগেশন অবশ্যই জরুরি।

অবশ্যই চেষ্টা করুন আপনার ব্লগ সাইটটি পরিষ্কার রাখার এবং নেভিগেশন মেনু গুলি সঠিক জায়গায় সঠিক ভাবে ব্যাবহার করার।

যাতে যেকোনো ভিসিটর্স খুব সহজেই আপনার সাইটটি নেভিগেট করে ব্যবহার করতে পারে ও তাদের উদেশ্য বা প্রয়োজনীতি পূরণ করতে পারে।

গুগল এডসেন্স আপনার সাইটটি রিভিউ করার সময় এই বিষয়গুলি দেখবে তাই অযথা সাইটের যেকোনো জায়গায় উইডজেট বা নেভিগেশন মেনু ব্যবহার করবেন না।

কারণ আপনার সাইটটি রিভিউ করার সময় এডসেন্স যদি দেখে যে সাইটটি অপরিষ্কার এবং রিভিউ করার জন্য সঠিক ভাবে নেভিগেট করা যাচ্ছে না।

তাহলে সেই সাইটকে এডসেন্স এপ্রুভাল দেবেনা।

৪. প্রয়োজনীয় কিছু পেজ অবশ্যই থাকতে হবে

Privacy policy, Disclaimer, Terms & conditions এবং Contact Us এই পেজগুলি আপনার ব্লগ সাইটে থাকা বাধ্যতামূলক বা অবশ্যই রাখতে হবে।

এবং Privacy policy এবং Disclaimer পেজে গুলিতে অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে যে:

  • আপনার সাইটটি থার্ড পার্টি অ্যাড নেটওয়ার্ক যেরকম গুগল এডসেন্স ইত্যাদির মাধ্যমে বিজ্ঞাপন পদর্শন করে।
  • আপনার সাইটটি কুকি ইত্যাদি ব্যবহার করে ভিসিটর্সদের এক্টিভিটি লক্ষ্য রাখার জন্য।
  • যদি কোনো ইউসারের ডেটা সংগ্রহণ করে তা উলেক্ষ করতে হবে।
  • বা আপনি আপনার সাইটে এফিলিয়েট লিংক ব্যবহার করছেন কিনা সেটিও উলেক্ষ করতে হবে।

তাই গুগল এডসেন্স এপ্রুভাল পেতে অবশ্যই এই বিষয়গুলি নজর রেখে আপনার সাইটে এই পেজগুলি যুক্ত করুন।

৫. অন্য কোনো অ্যাড নেটওয়ার্ক ব্যবহার করবেন না

আপনি যদি গুগল এডসেন্স ব্যবহারের জন্য আবেদন করে থাকেন সেই সময় আর অন্য কোনো অ্যাড নেটওয়ার্ড পরিষেবার জন্য আবেদন করবেন না।

সেই ক্ষেত্রে আপনি এডসেন্স অনুমোদন পাবেন না। এছাড়া আপনি যদি অন্য কোনো অ্যাড পরিষেবা ব্যাবহারকালীন এডসেন্সের জন্য আবেদন করে থাকেন সেই ক্ষেত্রেও আপনার আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হবে।

৬. আর্টিকেল সংখ্যা

আপনার সাইটে এডসেন্স পরিষেবা ব্যবহারের জন্য, আবেদন করার পূর্বে অবশ্যই চেষ্টা করুন কম করে ২০টি আর্টিকেল পাবলিশ করার।

এবং প্রিতিটি আর্টিকেলে কম করে ৮০০টি শব্দ অবশ্যই ব্যবহার করুন।

যদিও এডসেন্স পলিসির মধ্যে সেরকম কোনো আর্টিকেল সংখ্যা উলেক্ষ করা নেই তাও ২০টি আর্টিকেল পাবলিশ রাখলে সেফ সাইডে থাকবেন।

৭. আর্টিকেলগুলি ইউনিক হতে হবে

আপনার ব্লগ সাইটের আর্টিকেলগুলি অবশ্যই ইউনিক এবং অন্যান্য ব্লগ সাইটের আর্টিকেলের থেকে ভিন্ন হতে হবে।

আপনি যদি অন্য কোনো ব্লগ সাইটের আর্টিকেল কপি করে বা কিছু অংশ কপি করে আর্টিকেল লিখে থাকেন সেই ক্ষেত্রে এডসেন্স এপ্রুভাল পাবেন না।

গুগল সব সময় ইউনিক কনটেন্ট ও নিজের তৈরী কনটেন্ট চায়। তাই অন্য সাইট থেকে কপি করে বা তাদে সদৃশ কনটেন্ট নিজের ব্লগ সাইটে পাবলিশ করবেন না।

এডসেন্স আপনার সাইট রিভিউ করার সময় তা খুব সহজেই বুঝে যাবে এবং তৎক্ষণাৎ আপনার আবেদন প্রত্যাখ্যান করবে।

৮. ব্লগ সাইটের বয়স

এডসেন্স এপ্রুভালের জন্য যদিও ব্লগ সাইটের কোনো নির্দিষ্ট বয়স বা সময়সীমার প্রয়োজন হয় না তাও একটি ব্লগ সাইট তৈরির তৎক্ষণাৎ এডসেন্সের জন্য আবেদন করবেন না।

চেষ্টা করুন যে কম করে এক মাস অপেক্ষা করার এবং এই এক মাসে ভালো ও ইউনিক কনটেন্ট তৈরী করে আপনার সাইটকে সঠিক ভাবে তৈরী করার।

৯. কপিরাইট ইমেজ ব্যবহার করবেন না

কখনোই অন্য কোনো সাইট থেকে ফটো কপি করে বা গুগল থেকে সরাসরি ডাউনলোড করে নিজের ব্লগ সাইটে ব্যাবহার করবেন না।

কারণ এই সমস্ত ফটো বা ভিডিওগুলি কপিরাইট যুক্ত হয়ে থাকে যার ফলে আপনার সাইটে কপি রাইট স্ট্রাইক আস্তে পারে।

তার সাথে কপিরাইট কনটেন্ট ব্যবহারের জন্য গুগল এডসেন্স আপনার সাইটকে এপ্রুভাল দেবে না।

তাই সর্বদা কপিরাইট ফ্রি ইমেজ ডাউনলোড করে ব্যবহার করুন Pixabay বা Pexels এর মতো ওয়েবসাইটগুলি থেকে।

১০. আপনার সাইটটি অবশ্যই গুগলে ইনডেক্স বা জমা করুন

আপনার সাইটে এডসেন্স আবেদনের আগে অবশ্যই আপনার ব্লগ সাইটটি ও সাইটের সমস্ত পেজগুলি গুগলে ইনডেক্স করবেন।

এবং তার পরেই এডসেন্সের জন্য আবেদন করবেন। গুগল সার্চ কনসোল থেকে আপনি খুব সহজেই আপনাকে সাইট ইনডেক্স করতে পারবেন।

অবশ্যই মনে রাখবেন গুগল এডসেন্স এপ্রুভাল পেতে আপনার সাইট ও সাইটের সমস্ত পেজ ইনডেক্স হাওয়া দরকার।

তাই গুগল এডসেন্সের জন্য আবেদন করার আগে অবশ্যই দেখেনিন আপনার সাইটটি ওপরের আলোচিত সমস্ত বিষয়গুলি পালন করেছে কিনা।

ওপরের নিয়ম বা বিষয়গুলি আপনি যদি সঠিক ভাবে অনুসরণ করেন তাহলে প্রথমবার এডসেন্সের জন্য আবেদন করলেই আপনি অনুমোদন পেয়ে যাবেন।

আর আপনার ব্লগ সাইট যদি এখনো পর্যন্ত সঠিক ভাবে তৈরী না হয়ে থাকে তাহলে অপেক্ষা করুন এবং গুগলের এডসেন্সের এই নিয়ম গুলি অনুসরণ করুন।

আপনি যদি এডসেন্স ব্যবহারের এলিজিবিলিটি দেখতে চান তাহলে এখানে ক্লিক করুন।

আমাদের শেষ কথা:

ওপরের আলোচিত বিষয়গুলি আমি আমার নিজের ব্লগ সাইটের এডসেন্স ব্যবহারের অভিজ্ঞতা থেকে আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম।

আমার দীর্ঘ বিশ্বাস আপনি যদি এই বিষয়গুলো সঠিক ভাবে অনুসরণ করেন তাহলে সব থেকে বেশি সম্ভাবনা প্রথমবার এডসেন্স আবেদনেই অনুমোদন পেয়ে যাবেন।

এই পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্য আমায় কমেন্টে জানান এবং কোনো জিজ্ঞাসাবাদ থাকলে তাও কমেন্ট করে জানাতে পারেন।