অনলাইন ইনকাম করার ৭টি সহজ উপায় ২০২২

গুগলে কিছু সার্চ করা কীওয়ার্ড আছে যেগুলি সব থেকে বেশি সার্চ করা হয়েছে তার মধ্যে একটি হল অনলাইন ইনকাম কিভাবে করবো।

আজকে আমরা প্রায় সবাই চাই যে আমাদের মোবাইল বা কম্পিউটারের মাধ্যমে বাড়িতে বসে অনলাইনে আয় করতে।

আমরা অনলাইনে কাজ করে আয় করতে চাইলেও আমাদের অনেকেরই জানা নেই যে কিভাবে এবং কোন জায়গা থেকে শুরু করবো।

অর্থাৎ অনলাইন ইনকাম করার উপায় বা যে সব মাধ্যম গুলো আছে সেই সমস্ত বিষয়গুলিই আমাদের অনেকেরই জানা নেই।

তো আজকে আমরা জানবো অনলাইন ইনকাম করার ৭টি সহজ উপায় বা মাধ্যম যেগুলি জানা এবং শেখার পর আপনিও পারবেন অনলাইনে আয় করতে।

চলুন এবার আমরা জেনেনি বাড়িতে বসে আয় করার সেই ৭টি সহজ উপায়।

১. ইউটিউব চ্যানেল থেকে আয় করুন

আজ আমাদের কারোরই একথা অজানা নেই যে ইউটিউব চ্যানেল বানিয়ে সেখানে কনটেন্ট তৈরী করার মাধ্যমে আমরা আয় করা যায়।

ইউটিউব হল একটি জনপ্রিয় ফ্রি ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম যেখানে আপনি আপনার দক্ষতা দেখিয়ে একটি মোটা টাকা আয় করতে পারবেন।

আপনি কমেডি ভিডিও, এডুকেশনাল ভিডিও, টেক ভিডিও, ভিলগিং ভিডিও, মেকআপ বা লাইফস্টাইল এবং কুকিং এরকম বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ভিডিও বা কনটেন্ট তৈরী করে ইউটিউব থেকে ইনকাম করতে পারেন।

আপনাকে শুধু একটি গুগল একাউন্টের মাধ্যমে ইউটিউবে একটি চ্যানেল বানাতে হবে এবং সেখানে আপনার পছন্দের কনটেন্টটি পাবলিশ করতে হবে।

আজকের দিনে ইউটিউব হল একটি জনপ্রিয় এবং সহজে অনলাইন আয়ের করার উপায় বা সেরা মাধ্যম।

অবশ্যই মনে রাখবেন ইউটিউব থেকে রোজগার করার আগে আপনার চ্যানেলের এক হাজার সাবস্ক্রাইবার এবং চার হাজার ওয়াচ টাইম লাগবে।

২. ফ্রিল্যান্সিং করুন

ফ্রিল্যান্সিং করে অনলাইন আয় করা সর্বদাই একটি জনপ্রিয় অনলাইন ইনকামের রাস্তা। এরকম বহু ওয়েবসাইট আছে যারা ফ্রিল্যান্স কাজ প্রদান করে থাকে।

ফ্রিল্যান্সার বলতে সাধারণত একজন সেলফ এমপ্লয়েডকে বোঝায় এবং আপনি ফ্রিল্যান্সার হিসাবে যেকোনো কাজ করতে পারেন।

আপনাকে শুধু কোনো ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইটে একটি একাউন্ট তৈরী করতে হবে এবং সেখানে আপনাকে একটি ওয়ার্ক প্রোফাইল বা পোর্টফোলিও তৈরী করতে হবে।

প্রোফাইলের মধ্যে আপনি যে কাজটি ফ্রিল্যান্সার হিসাবে করতে চান সেই কাজটির প্রতি অনুভব বা অভিজ্ঞতা, কাজটি করতে কত সময় এবং পারিশ্রমিক নেবেন ইত্যাদি আরো কিছু বিষয় সেগুলি তুলে ধরতে হবে।

কারণ যখন আপনি কোনো ফ্রিল্যান্সিং টাস্কে আবেদন করবেন আপনার ক্লাইন্ট আপনাকে কাজ দেওয়ার আগে যাতে যাচাই করে নিতে পারে যে আপনি কাজটি করতে পারবেন কিনা বা তা করতে কত সময় ও পারিশ্রমিক আপনাকে দিতে হবে।

একজন নবীন বা বিগেনার হিসাবে আপনি ফ্রিল্যান্সিং করে দৈনিক $৫ – $১০০ পর্যন্ত ইনকাম করে নিতে পারেন।

তবে অবশ্যই মনে রাখবেন আপনাকে তখনই পারিশ্রমিক প্রদান করা হবে যখন আপনি কোনো কাজ সম্পূর্ণভাবে সম্পাদন করতে পারবেন এবং তা ক্লায়েন্টের পছন্দ হবে।

যদি ক্লাইন্টের আপনার কাজটি পছন্দ না হয়ে থাকে সেই ক্ষেত্রে আরো কিছু বার কাজটি পুনরায় করতে হতে পারে যতক্ষণ না ওনার পছন্দ হচ্ছে।

কিছু জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং সাইট হল Upwork.com, Fiverr.com এবং Freelancer.com

৩. এফিলিয়েট মার্কেটিং করুন

এফিলিয়েট মার্কেটিং পদ্ধতি হল যখন আপনি অন্য কোনো কোম্পানি বা বেক্তির দ্রব্য প্রচার বা প্রোমোট করে বিক্রি করতে সাহায্য করেন এবং তার পরিবর্তে সেই বিক্রিত দ্রব্যের দামের কিছু অংশ পুরস্কার হিসাবে আপনাকে প্রদান করা হয়।

এই ক্ষেত্রে আপনি যেই প্রোডাক্টটি প্রোমোট করতে চান তার একটি এফিলিয়েট লিংক আপনাকে প্রদান করা হয় এবং যখন কেউ আপনার ওই লিংক থেকে সেই প্রোডাক্টটি ক্রয় করে তার পরিবর্তে পুরস্কার হিসাবে আপনি ওই প্রোডাক্টের দামের কিছু অংশ এফিলিয়েট কমিশন হিসাবে পান।

ইন্টারনেটে এফিলিয়েট মার্কেটিং একটি জনপ্রিয় মার্কেটিং পদ্ধতি এবং এই পদ্ধতির মাধ্যমে প্রফেশনাল এফিলিয়েট মার্কেটাররা মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন করে থাকে।

এফিলিয়েট মার্কেটিং শারীরিক এবং ডিজিটাল দুটি দ্রব্যের ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে। কিছু জনপ্রিয় এফিলিয়েট মার্কেটিং প্লাটফর্ম হল:

  • Amazon Affiliate
  • Clickbank
  • ShareAsale
  • CJ Affiliate

বিশেষ করে ব্লগারদের জন্য এফিলিয়েট মার্কেটিং খুবই জনপ্রিয়।

এই মার্কেটিং পদ্ধতির মাধ্যমে একটি ভালো অংকের অর্থ উপার্জন করা যায় অনলাইনে। তাই অনলাইন ইনকামের জন্য আপনিও শিখতে পারেন।

আপনি যদি এফিলিয়েট মার্কেটিং শিখতে চান তাহলে ইউটিউবে এরকম অনেক টিউটোরিয়াল আছে যেখান থেকে আপনি খুব সহজেই তা শিখতে পারবেন।

এফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে নিচের আর্টিকেলটি পড়তে পারেন:

৪. ব্লগিং শুরু করুন

বাড়িতে বসে আয় করার আরেকটি সহজ উপায় হল ব্লগিং। আর যদি আপনার লেখালেখি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই ব্লগিং শুরু করুন অনলাইনে ইনকাম করার জন্য।

একটি ব্লগ সাইট শুরু করা আজ খুবই সহজ। আপনি গুগল এবং ইউটিউবে এরকম অনেক ভিডিও ও আর্টিকেল পেয়ে যাবেন যেখান থেকে ব্লগিং শিখতে পারবেন।

একটি ব্লগ সাইট বানাতে আপনার একটি ডোমেইন এবং হোস্টিং কিনতে হবে তারপর আপনার সাইটের জন্য একটি থিম সিলেক্ট করুন এবং আর্টিকেল লেখা শুরু করুন।

এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর আপনার ব্লগ সাইটটি গুগল এডসেন্সের সাথে যুক্ত করুন এবং আপনার ব্লগ সাইটে এড দেখিয়ে ব্লগ থেকে আয় করা শুরু করুন।

এছাড়াও আপনি আপনার ব্লগ সাইটে এফিলিয়েট প্রোডাক্ট প্রমোট করার মাধমেও আয় করতে পারবেন।

৫. ড্রপসিপিং বিসনেস শুরু করুন

অনলাইন ইনকাম করার জন্য আপনি ড্রপসিপিং বিসনেসও শুরু করতে পারেন। এই ক্ষেত্রে আপনার একটি সাধারণ বিসনেস শুরু করার মত বেশি পুঁজি বা মূলধন দরকার পরে না।

ড্রপসিপিং হল এমন একটি সাপ্লাই চেন ব্যাবস্থাপনা যেখানে বিক্রয়ের জন্য আপনাকে কোনো দ্রব স্টক করে রাখতে হয়না।

অর্থাৎ আপনি যখন কোনো প্রোডাক্টের অর্ডার পান তখন সেই কাস্টমারের অর্ডার এবং শিপমেন্ট ডিটেইলস সরাসরি অন্য একজন খুচরা বিক্রেতা বা একজন পাইকারের কাছে স্থানান্তর করে করেন।

যিনি তখন সরাসরি কাস্টমারের কাছে সেই প্রোডাক্টটি ডেলিভার বা পরিবহন করে দেবে তার সমস্ত নিজের খরচে।

এই ক্ষেত্রে আপনি প্রোডাক্টের সাথে আগে থেকে কিছু মুনাফা বা লাভ যোগ করে রাখেন যা প্রোডাক্টটি কাস্টমারের কাছে পরিবহনের পর আপনাকে প্রদান করা হয়।

ড্রপশিপিংয়ের জন্য আপনাকে একটি অনলাইন ই-কমার্স স্টোর বা ওয়েবসাইট খুলতে হবে যেখানে আপনি যে প্রডাক্টগুলি বিক্রয় করতে চান সেগুলি রাখবেন।

নিজের ড্রপসিপিং বিসনেস শুরু করতে Shopify বা WooCommerce এর সাহায্যে আপনি আপনার নিজের অনলাইন স্টোর খুলতে পারবেন।

৬. ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম থেকে আয় করুন

আপনি কি জানেন আপনি ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম থেকেও ইনকাম করতে পারবেন তাও শুধু একটি না বিভিন্ন উপায়ে।

আজ ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে যে সমস্ত পেজের লক্ষ লক্ষ বা মিলিয়ন ফলোয়ার আছে তারা কম করে দৈনিক ৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকাও ইনকাম করে থাকে।

আর তারা এই ইনকাম করে থাকে কোনো কোম্পানি বা বেক্তির কোনো প্রোডাক্ট বা পেজ তাদের পেজে প্রমোট করে ও সাউটআউট করে।

এছাড়াও আপনি ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রামে পেজে বানিয়ে এফিলিয়েট মার্কেটিং, নিজের কোনো প্রোডাক্ট বিক্রি ও ড্রপ শিপিং করেও টাকা ইনকাম করতে পারবেন।

৭. রিসেলিং করে ইনকাম করুন

বাড়িতে বসে অনলাইনে বিশেষত মোবাইল দিয়ে ইনকাম করার আরো একটি ভালো ও সহজ উপায় হল প্রোডাক্ট রিসেলিং করা।

ইন্টারনেটে এরকম অনেক ওয়েবসাইট এবং অ্যাপ আছে যেখান থেকে আপনি প্রোডাক্ট নিয়ে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া সাইটের তা রিসেলিং বা পুনর্বিক্রয় করতে পারবেন।

রিসেলিং পদ্ধতিতে আপনি কোনো রিসেলিং প্লাটফর্ম থেকে প্রোডাক্ট নিয়ে তার প্রাথমিক মূলের সাথে নিজের একটি প্রফিট মার্জিন যুক্ত করে ও নিজের ব্র্যান্ড নামের সাথেই বিক্রয় করতে পারবেন।

এবং প্রোডাক্টটি একবার বিক্রয় হয়ে যাওয়ার পর রিসেলিং কোম্পানি আপনাকে আপনার প্রফিট মার্জিন বা লাভটি প্রদান করবে।

বাড়িতে বসে সব থেকে সহজ উপায়ে অনলাইন ইনকাম করার জন্য রিসেলিং বিসনেস অবশ্যই একটি সহজ এবং ভালো মাধ্যম।

আমাদের শেষ কথা:

অবশ্যই মনে রাখবেন অফলাইন হোক বা অনলাইন টাকা উপার্জন করার জন্য অবশ্যই পরিশ্রম এবং সময় দুটিই দিতে হবে।

এই না যে আজ ভাবলাম বা শুরু করলাম আর কাল থেকে হাজার হাজার টাকা আসা শুরু হয়ে যাবে, তা শুধু স্বপ্নে হয় বাস্তবে না।

ওপরে যে অনলাইন ইনকাম করার ৭টি সহজ উপায় আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম তা আমি নিজের অনুভব থেকে বুঝেছি যে অনলাইনে আয় করার জন্য এগুলি কিছুটা হলেও সহজ উপায় যা সবাই শুরু করতে পারবে।

আজ যদি অন্যরা পারে তাহলে আপনি কেন না? চেষ্টা করুন অবশ্যই আপনিও পারবেন অনলাইনে ইনকাম করতে।

আপনাদের যদি এই আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আমায় কমেন্ট করে জানান এবং যদি কোনো প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলেও কমেন্টে জানাতে পারেন।