নতুন ব্লগার যে সমস্ত ভুলগুলি করে থাকে

নতুন ব্লগাররা সাধারণত যে ভুলগুলি করে থাকে

আমরা জানি যে আজ অনলাইন আয় করার জন্য ব্লগিং খুবই জনপ্রিয় মাধ্যম। তাই বহু লোক ব্লগিং শুরু করেছে বা শুরু করার কথা ভাবছে।

আপনার যদি একটি ব্লগ সাইট থেকে থাকে বা আপনি যদি একটি নতুন ব্লগ সাইট শুরু করার কথা ভাবেন তাহলে একদম ঠিক জায়গায় এসেছেন।

কারণ আজকে আমরা এই আর্টিকেলে জানবো এরকম কিছু সাধারণ ভুল যা প্রায় প্রতিটি নতুন ও পুরানো ব্লগাররা করে থাকেন।

তাই অবশ্যই এই আর্টিকেলটি একদম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন এবং আপনার যদি আগে থেকেই একটি ব্লগ সাইট থাকে।

তাহলে অবশ্যই যাচাই করেনিন যে আপনিও এই ভুলগুলি করছেন নাতো। অন্যদিকে আপনি যদি নতুন ব্লগ শুরু করতে চান তাহলে অবশ্যই এই ভুলগুলি এড়িয়ে চলুন।

তো চলুন এবার জেনেনি যে ব্লগাররা বিশেষ করে নতুন ব্লগাররা সাধারণত কোন ভুলগুলি করে থাকেন।

নতুন ব্লগারদের যে বিষয়গুলু জানা প্রয়োজন

১. খারাপ হোস্টিং ও ডোমেইন

আমি এই বিভাগের প্রায় প্রতিটি আর্টিকেলেই একই কোথা তুলে ধরি যে একটি হোস্টিং ও ডোমেইন কেনার পূর্বে অবশ্যই কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করেনিন।

হোস্টিং ও ডোমেইন কেনার পূর্বে যে বিষয়গুলি অবশ্যই লক্ষ্য রাখবেন তা নিয়ে আমাদের সাইটের আর্টিকেল গুলি অবশ্যই পড়ুন।

কারণ আপনি যদি এই সমস্ত ছোটখাটো বিষয়গুলি আগে থেকে খেয়াল না রাখেন তাহলে ভবিষ্যতে আপনাকে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হবে।

২. ব্লগ সাইটের একাধিক Niche বা বিষয় থাকা

নতুন ও পুরানো প্রায় সমস্ত ব্লগাররা যে মারাত্মক ভুলটি করে থাকে তা হল একাধিক Niche বা বিষয়ের ওপর আর্টিকেল পাবলিশ।

কারণ আপনি যদি ভেবে থাকেন যে সমস্ত বিষয় নিয়ে ব্লগ লিখলে বেশি পরিমান ও সমস্ত রকমের ভিসিটর্স আপনার সাইটে আসবে তাহলে ভুল ভাবছেন।

আপনি যদি এরকম করেন তাহলে একতো আপনার সাইটে ভিসিটর্স আসবেই না অপর দিকে ব্লগিংয়ে সফল হতেও পারবেন না।

একাধিক বিষয় নিয়ে ব্লগ লিখলে সার্চ ইঞ্জিন বুছতে পারেনা যে আপনার ব্লগ সাইটটি ঠিক কোন বিষয়ের ওপর তাই সে কোনো ভিসিটর্স প্রেরণ করবে না।

তাই অবশ্যই একাধিক বিষয় নিয়ে আর্টিকেল লেখা এড়িয়ে চলুন এবং শুধুমাত্র একটি বিষয় বা Niche ধরে ব্লগ পোস্ট তৈরি করুন।

৩. অর্থের জন্য ব্লগিং করা

ব্লগিং থেকে একটি মোটা অংকের টাকা উপার্জন করা যায় ঠিকই কিন্তু আপনি যদি অর্থকে একমাত্র মাত্র উদেশ্য ও গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।

তাহলে আপনি ভুল করছেন। কারণ আপনি যদি ব্লগিং শুধু মাত্রই অর্থ উপার্জনের জন্য শুরু করে থাকেন সেই ক্ষেত্রে সাফল্য পাবেন না।

একথা সত্য যে যেকোনো বিষয়ে সাফল্য পেতে তার জন্য যথেষ্ট পরিমান পরিশ্রম ও সময় প্রদান করতে হয় তার পরেই সাফল্য আসে।

ঠিক সেরকম ভাবেই একটি ব্লগ সাইট শুরু করার পর তার পেছনে অবশ্যই পর্যাপ্ত সময় ব্যয় করতে হয় ও পরিশ্রম করতে হয়।

তার পরেই সাফল্য আসে। আর আপনি যদি শুধু টাকার পেছনে দৌড়ান সাফল্য তো দূরের কথা খুব শিগ্রিই হার মেনে যাবেন।

এরকম অনেক ব্লগার আছে যারা ঠিক এই কারণের জন্যই সাফল্য না পেয়ে তাদের ব্লগ সাইট বন্ধ করে দিয়েছেন।

৪. দ্রুত ফলাফলের প্রত্যাশা করা

নতুন ব্লগাররা আরেকটি যে ভুল করে থাকেন বা ভুল আশা করে থাকে তা হলো দ্রুত ফলাফল ও সাফল্য পাওয়ার প্রত্যাশা।

আপনি যদি ভেবে থাকেন যে আজ একটি ব্লগ শুরু করবেন এবং দশ দিন পরেই অনেক ভিসিটর্স ও অর্থ উপার্জন করা শুরু করে দেবেন।

তাহলে তা শুধু স্বপ্নেই সম্ভব, বাস্তবে না। কারণ আপনার ব্লগ সাইটটি গুগল বা সার্চ ইঞ্জিন গুলিতে ঠিকমতো লাইভ হতেই এক দুই মাস সময় নেয়।

আর ঠিক একটু আগে আমরা যেই বিষয়টি জানলাম সেরকমই আপনাকে আপনার ব্লগ সাইটের প্রতি সময়, পরিশ্রম ও ধৈর্য দিতে হবে।

তাই আপনি যদি একটি ব্লগ শুরু করার প্রকল্পনা করে থাকেন বা অলরেডি শুরু করে দিয়েছেন তাহলে নিজেকে সেরকম ভাবে তৈরি করুন।

৫. এসইও না করা বা উপেক্ষা করা

ব্লগিং জগতে যারা নতুন তারা এসইও (SEO) বা সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন শব্দটির সাথে সেরকম ভাবে পরিচিত হয় না।

বা বলা ভালো যে নতুন ব্লগাররা এটিকে ঝঞ্ঝাট বা সমস্যা ভাবে তাই এসইও-র ব্যাপারটি পুরোপুরি ভাবে উপেক্ষা করে চলে।

কিন্তু অবশ্যই মনে রাখবেন একটি ওয়েবসাইট বা ব্লগ সাইটের সাফল্য ও বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে এসইও (SEO) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ব্লগ সাইটে এসইও-র প্রয়োগ করে আপনি গুগল সহ অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনে সহজে রেঙ্ক করতে পারবেন যার ফল স্বরূপ আপনার সাইটে বেশি ভিসিটর্স আসবে।

আর বেশি ভিসিটর্স মানেই বেশি মুনাফা। তাই সার্চ ইঞ্জিনে রেঙ্ক করার মাধ্যমে সাইটে বেশি ভিসিটর্স পেতে অবশ্যই এসইও-র প্রয়োগ করুন।

এসইও কি? কিভাবে কাজ করে ও কিভাবে এসইও করবেন? তা জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন

৬. আর্টিকেল লেখার আগে কীওয়ার্ড রিসার্চ না করা

এসইও-র সর্ব প্রথম অংশ ও সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলটি হল কীওয়ার্ড রিসার্চ, যাকে অন-পেজ এসইও এর মধ্যে ফেলা হয়।

কিন্তু এরকম অনেক নতুন ও পুরানো ব্লগার আছে যারা আর্টিকেল লেখার পূর্বে কখনোই সঠিক ভাবে কীওয়ার্ড রিসার্চ করে না।

কীওয়ার্ড রিসার্চের মাধ্যমে বিভিন্ন কীওয়ার্ড আইডিয়া পাওয়া যায় এবং জানা যায় যে ঠিক কোন কীওয়ার্ডগুলি বেশি সার্চ করা হয়।

এবং সঠিক হাই ভলুম কীওয়ার্ড নির্বাচন ও ব্লগ পোস্টে ব্যবহার করার মাধমে সহজে নির্দিষ্ট কাস্টমারদের টার্গেট করা যায়।

আর্টিকেলে কীওয়ার্ড ব্যবহারের ফলে সার্চ ইঞ্জিনের বুছতে সুবিধা হয় আপনার পোস্টের বিষয় কি এবং সে তখন নির্দিষ্ট ভিসিটর্সদের কাছে আপনার আর্টিকেলটি তুলে ধরে।

সঠিক ভাবে কীওয়ার্ড রিসার্চ করে এবং ব্লগ পোস্ট লেখার সময় সেই সমস্ত কীওয়ার্ড ব্যবহার করে, সার্চ ইঞ্জিনে রেঙ্ক করার সুযোগ বেড়ে যায়।

তাই আর্টিকেল লেখার পূর্বে কীওয়ার্ড রিসার্চকে গুরুত্ব দিন এবং অবশ্যই আর্টিকেলে কীওয়ার্ড রিসার্চ দ্বারা নির্বাচিত কীওয়ার্ড ব্যবহার করুন।

৭. কনটেন্ট কপি ও কপিরাইট উলংঘন করা

নতুন ব্লগাররা যে দুটি সাধারণ কিন্তু মারাত্মক ভুল করে থাকে তা হল অন্য কারো কনটেন্ট কপি করা ও কপিরাইট মেটেরিয়াল ব্লগে ব্যবহার করা।

আপনি যদি ভেবে থাকেন যে অন্য যেকোনো সাইট থেকে কনটেন্ট কপি করে নিজের সাইটে চালিয়ে দেবেন তাহলে ভুল করছেন।

কারণ সার্চ ইঞ্জিন বট খুব সহজেই ধরে নেবে যে আপনার সাইটের কন্টেন্টগুলি আপনার নিজের তৈরী না অন্য সাইট থেকে কপি করা।

আর আপনি যদি এই কাজ বরং বার করেন তাহলে সার্চ ইঞ্জিন থেকে আপনার সাইটটি পেনালইজড করে দেওয়া হবে।

এবং আপনার সাইটটিকে একটি ডুপ্লিকেট ও স্পেম সাইট হিসাবে বিবেচনা করা হবে।

অন্যদিক আপনি যদি অন্য কারো কপিরাইট জিনিস তার অনুমতি ছাড়া নিজের ব্লগ সাইটে ব্যবহার করেন সেই ক্ষেত্রেও আপনাকে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।

আপনি যদি গুগল বা অন্য কোনো ওয়েবসাইট থেকে সরাসরি ফটো বা ভিডিও ডাউনলোড করে নিজের ব্লগ সাইটে ব্যবহার করেন।

তাহলে সেই ক্ষেত্রে আপনার ব্লগ সাইটের ওপর কপিরাইট স্ট্রাইক আসতে পারে আর যা আপনার ব্লগের জন্য কখনোই কাম্য নয়।

তাই ব্লগ সাইটে যে কোনো ফটো, থাম্বনেইল, ফিচার্ড ইমেজ ও ভিডিও ব্যবহারের জন্য কপিরাইট ফ্রি স্টক ওয়েবসাইট ব্যবহার করুন।

৮. ব্যাকলিংক তৈরি না করা

কিছু নতুন ব্লগার যে ভুলটি করে থাকে তা হল তাদের সাইটটি সার্চ ইঞ্জিনে ইনডেক্স করানো এবং সাইট ম্যাপ সাবমিট করাকেই যথেষ্ট ভাবে।

তারা আর আলাদা ভাবে তাদের ব্লগ সাইট বা ব্লগ পোস্টগুলি বিভিন্ন ভাবে প্রমোট করে ব্যাকলিংক তৈরিতে গুরুত্ব দেয়না।

আর কখনো কখনো ঠিক এই বিষয়গুলিই হয়ে দাঁড়ায় তাদের ব্যার্থতার মূল কারণ। একটি ওয়েবসাইটের জন্য ব্যাকলিংক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

আপনি যত বেশি আপনার ব্লগ সাইট প্রমোট করবেন ততো ব্যাকলিংক তৈরি করতে সক্ষম হবেন আর তার ফলে বেশি ভিসিটর্স ও হাই রেঙ্ক করার সুযোগ অনেক বেড়ে যাবে।

৯. ভুল আর্টিকেল স্ট্রাকচার বা লে-আউট

অনেকেই আছে যারা আর্টিকেল বা ব্লগ লেখার সময় সঠিক ভাবে আর্টিকেল বা ব্লগে পোস্ট করার নিয়ম অনুসরণ করে না।

আপনি যদি একটি উন্নত মানের ব্লগ পোস্ট লিখতে চান যা ভিসিটর্সদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে তাহলে অবশ্যই আপনাকে ব্লগ লেখার সঠিক নিয়ম গুলি অনুসরণ করতে হবে।

অন্যদিকে আপনি যদি অগোছালো বা নিজের মতো গঠন দিয়ে আর্টিকেল লেখেন এবং সঠিক গঠন অনুসরণ না করেন।

তাহলে আপনার সাইটের ভিসিটর্সরা ব্লগ পোস্ট পড়তে ইচ্ছুক হবে না বা পুরো না পরেই আপনার সাইট ত্যাগ করবে।

অবশ্যই মনে রাখবেন সঠিক গঠন ও নিয়ম অনুসারে আর্টিকেল লিখলে তা আপনার আর্টিকেলের গুনগত মান বৃদ্ধি করে যার ফলে আপনার সাইটের ভিসিটর্সদের আর্টিকেলগুলি পড়তে ভালো লাগে ও সুবিধা হয়।

১০. আর্টিকেল এডিট ও পুনর্মূল্যায়ন না করা

একটি আর্টিকেল তৈরির জন্য আর্টিকেল আইডিয়া ঠিক করা, কীওয়ার্ড রিসার্চ, এসইও প্রয়োগ ও শেষ মেশ আর্টিকেলটি লেখা এই সমস্ত মিলিয়ে অনেকটাই সময় লাগে।

কিন্তু তার মানে কখনই এই না যে একটি আর্টিকেল তৈরি করতে অনেকটা সময় ব্যয় হয় বলে তা পুনর্মূল্যায়ন করতে সময় দেবেন না।

কারণ আর্টিকেলের মধ্যে থাকা ছোটো খাটো ভুলের জন্য ভিসিটর্সরা ওই আর্টিকেলটি পুরো না পরে আপনার সাইট ত্যাগ করতে পারে।

আর আপনি যে এত সময় ও পরিশ্রম দিয়ে ব্লগ পোস্টগুলি তৈরি করলেন তা সবই বার্থ হবে।

তাই আর্টিকেল লেখার পর তা পাবলিশ করার পূর্বে অবশ্যই ভালো ভাবে সময় নিয়ে তা পুনর্মূল্যায়ন করে ভুলগুলি সংশোধন বা এডিট করুন।

১১. ব্লগ পোস্টের ধারাবাহিকতা বজায় না রাখা

আপনি যদি নিজের ব্লগ সাইটটিকে সাফল্য দিতে চান তাহলে আপনার মধ্যে নিয়মানুবর্তিতা এবং ব্লগ পোস্টে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে।

আপনি যদি নিজের ইচ্ছামতো ব্লগ পোস্ট তৈরি ও পাবলিশ করেন এবং নির্দিষ্ট ধারাবাহিকতা বজায় না রাখেন তাহলে কখনোই সাফল্য পাবেন না।

আপনাকে নিয়মিত এবং প্রায়শই পোস্ট করতে হবে যাতে আপনার সাইটের ভিসিটর্সরা কিছু না কিছু নতুন আপনার ব্লগ সাইট থেকে পায়।

আর আপনি যদি তা না করেন তাহলে ভিসিটর্সরা বার বার আসার পর আপনার সাইটে যদি কিছু না পায় তাহলে তারা সম্পূর্ণ ভাবে আপনার সাইটে আসা বন্ধ করে দিতে পারে।

তাই নতুন ব্লগাররা সপ্তাহে অবশ্যই কম করে তিনটি পোস্ট লিখে পাবলিশ করুন এবং একই ভাবে ধারাবাহিকতা বজায় রাখুন।

আমাদের শেষ কথা:

একজন ব্লগার হয়ে ওপরের আলোচিত এরকম অনেক ভুল আমিও করেছিলাম যা আজ এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনার সাথে শেয়ার করলাম যাতে আপনিও সেই সমস্ত ভুলগুলি না করে সময় বাঁচাতে পারেন।

আপনার যদি এই আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই অন্যদের সাথে শেয়ার করুন এবং তার সাথে আমকেও কমেন্টে জানান।