টেকনিক্যাল এসইও (technical seo) কি

অ্যাডভান্স টেকনিক্যাল এসইও বাংলা টিউটোরিয়াল

আপনি যদি আপনার সাইটে সমস্ত এসইও টেকনিক ব্যবহার করেও থাকেন তার মানে এই না যে আপনি গুগলে অবশ্যই রেঙ্ক করবেন।

কারণ আপনার সাইটে যদি টেকনিক্যাল এসইও সমস্যা থাকে বা সঠিক না থাকে তাহলে এটা নিশ্চিত যে আপনি রেঙ্ক করতে পারবেন না।

এবং এসইওর ওপর আপনার যত পরিশ্রম থাকবে তা সবই বিফলে যাবে এবং আপনার সাইট গুগলে ভালোভাবে পারফর্ম করতে পারবে না।

তাহলে এই টেকনিক্যাল এসইও কি? আজকে আমরা এই আর্টিকেলে এই বিষয় নিয়েi আলোচনা করবো তো চলুন জেনেনি।

টেকনিক্যাল এসইও (Technical SEO) কি?

আপনি আপনার ওয়েবসাইট বা ব্লগ সাইটের কনটেন্ট বাদে যার বা যে বিষয়গুলির ওপর এসইও করেন তাকেই বলা হয় টেকনিক্যাল এসইও।

এই বিষয়টি আরো ভালো ভাবে বোঝার জন্য আমরা এখানে একটি শপিং মলকে আমাদের উদাহরণ হিসাবে ধরে নেবো।

ধরুন আপনি একটি ভালো জনসংখ্যা বিশিষ্ট সিটির মধ্যে একটি শপিং মল তৈরি করছেন তাহলে তা ডিসাইন করার জন্য সঠিক নির্মাণকৌশল চাই।

কারণ তার মধ্যে পার্কিং সুবিধা ও তার সাথে প্রবেশ ও প্রস্থানের জায়গা সঠিক রাখতে হবে জাত গাড়ি ও যাতায়াতে অসুবিধা না হয়।

তার পর নেভিগেশন সঠিক রাখতে হবে যাতে কেউ যদি নির্দিষ্ট কোনো ফ্লোরের শপ স্টোরের মধ্যে যেতে চায় তা যেন সহজে যেতে পারে।

তাই তার জন্যে আপনি বিভিন্ন ফ্লোরের ম্যাপ রাখতে পারেন বা ক্যাটাগরি অনুযায়ী বিভিন্ন স্টোরের লোকেশন যুক্ত করতে পারেন।

তার সাথে শপিং মলের জায়গা বড় রাখতে হবে যাতে সহজে ভিড়ভাট্টা না হয় এবং ডেকোরেশন ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকেও নজর দিতে হবে।

তার সাথে এন্টারটেইনমেন্ট এর জন্য মাল্টিপ্লেক্স এবং খাবার দাবারের জন্য বিভিন্ন রকমের ফুড কোড ও রাখতে হবে।

তাহলে বুছতেই পারছেন যে মলের ডিসাইনার জন্যই আপনাকে কত কিছু করতে হচ্ছে। আবার শুধু মল বানালেই যে কাস্টমার আসবে সেরকম না।

তার জন্য দেশি ও বিদেশী ভালো নামি দামি ব্রান্ডের স্টোর ও প্রোডাক্ট রাখতে হবে এবং খাবার দাবার ও মাল্টিপ্লেক্সও ব্যবস্থা করতে হবে।

এখন আপনার শপিং মল তো তৈরি হয়ে গেলো কিন্তু সেখানে কাস্টমার নিয়ে আসার জন্য লোকাল নিউজ পেপার বা অন্যান্য মাধ্যমের দ্বারা প্রচার করতে হবে।

এবার চলুন আমরা এই শপিং মলের পুরো ব্যাপারটা এসইওর সাথে তুলনা করি।

প্রথম তুলনা

আপনি মলের ডিসাইনের জন্য যে কাজগুলি করলেন যেরকম, নির্মাণকৌশল, পার্কিং ফ্যাসালিটি, প্রবেশ প্রস্থান রুট, ফ্লোর নেভিগেশন, বড় স্পেস এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এই সমস্ত বিষয়গুলি টেকনিক্যাল এসইও-র মধ্যে পরে।

আমাদের ওয়েবসাইট ডিসাইন করার সময় ঠিক একই ভাবে এই সমস্ত বিষয়গুলির দিকেই আমাদের ভালো ভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে।

যেমন আমাদের সাইটের হোস্টিং লোকেশন কোথায়, সাইটের আর্কিটেকচার কেমন, নেভিগেশন কত ভালো সাইটের লোডিং স্পিড কিরকম ইত্যাদি বিষয়গুলি খেয়াল রাখতে হয়।

দ্বিতীয় তুলনা

এবার আপনার মলের মধ্যে যে সমস্ত শপ বা স্টোর গুলি আছে সেগুলি আমরা কনটেন্ট বলতে পারি।

শপের মধ্যে যে এন্টেরিয়া, এম্বিয়েন্স এবং বিভিন্ন প্রোডাক্টগুলি আছে তা কিভাবে এরেঞ্জ করা হয়েছে তাকে আমরা অন পেজ এসইও বলতে পারি।

কারণ আপনি যত ভালো ভাবে এই জিনিসগুলি অর্গানিস বা সংগঠিত করতে পারবেন তাতো বেশি মানুষের নজরে যাবে ও বিক্রি বাড়বে।

ঠিক যেরকম ভাবে আমরা অন পেজ এসইও করার জন্য সুন্দর ও নির্দিষ্ট গঠন মেনে ব্লগ পোস্ট বা আর্টিকেল তৈরি করি।

এবং কীওয়ার্ড রিসার্চের মাধ্যমে প্রাপ্ত কীওয়ার্ডগুলি সঠিক ভাবে বুঝেসুজে আর্টিকেলের বিভিন্ন জায়গায় ব্যবহার করি।

তৃতীয় তুলনা

এখন আপনি যদি জনসংখ্যা বিশিষ্ট সিটি বা শহরে মল তৈরি করেন সেই ক্ষেত্রে আপনার প্রাকৃতিক ভাবেই আপনার মলে কাস্টমার আসবে।

কিন্তু তা যদি না হয় বা আপনি যদি আরো ক্রেতাদের আপনার মলে নিয়ে আসতে চান তাহলে আপনাকে মার্কেটিং করতে হবে।

যাকে আমরা অফ পেজ এসইওর সাথে তুলনা করতে পারি যেরকম ব্যাকলিংক, ইন্টারনাল লিঙ্কিং এবং সোশ্যাল প্রমোশন।

তো এবার আমি আশা করছি যে এই মল এবং এসইওর মধ্যে তুলনা করার পর এসইও সম্পর্কে বিভিন্ন ধারণা গুলি পেয়েছেন।

এবং তার সাথে এই বিষয়টিও বুছতে পেরেছেন যে এসইওর প্রতিটি স্টেপই গুরুত্বপূর্ণ হয় যা প্রথমে বোঝাতে চেয়েছিলাম।

তো চলুন এবার জেনেনি যে টেকনিকাল এসইওর মধ্যে কোন কোন বিষয়গুলি আসে আর আমরা কিভাবে তা করবো।

টেকনিক্যাল এসইও-র বিষয়গুলি কি এবং কিভাবে করবেন

টেকনিক্যাল এসইও কিভাবে শিখবো
Technical SEO এর বিষয় ও যেভাবে করবেন।

১. পেজ স্পিড

যেকোনো সার্চ ইঞ্জিনের জন্যই পেজ স্পিড অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ আর গুগলও এই বিষয়টি বেশি গুরুত্ব দেয় বিশেষ করে মোবাইল পেজ স্পিড।

আপনার সাইটের পেজ স্পিড যদি ধীর হয় তাহলে সাইটের কনভার্সন রেট অনেক কমে যাবে তার সাথে সাইটের বাউন্স রেট বেড়ে যাবে।

আর যা আপনার ব্যবসা এবং ওয়েবসাইট রেংকিংয়ের ক্ষেত্রে অনেকেই খারাপ প্রভাব ফেলে।

আপনি GTMetrix বা Google Page Insight এই রকম টুলগুলির মাধ্যমে আপনার সাইটের স্পিড চেক করতে পারেন।

এবং আপনি যদি একজন ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহারকারী হন তাহলে এরকম বহু ওয়ার্ডপ্রেস প্লাগিন্স আছে যাদের সহজে আপনার সাইটের পেজ স্পিড ইম্পুভ করতে পারবেন।

২. সাইটের গঠন বা ডিসাইন

আপনার সাইটের গঠন বা ডিসাইন যদি ভালো ও সুগঠিত হয় তাহলে ভিসিটর্সরাও আপনার সাইট বেশি পছন্দ করবে।

আর ভিসিটর্সরা যত বেশি আপনার সাইট ভিসিট করতে পছন্দ করবে সার্চ ইঞ্জিনগুলিও আপনার সাইট পছন্দ করবে ও রেঙ্ক করতে সাহায্য করবে।

একটি ওয়েবসাইটের ভালো গঠন বলতে সাইটটির ডিসাইন ভালো হতে হবে তার সাথে তার নেভিগেশন যাতে অবশ্যই সহজ হয়।

যাতে ভিসিটর্সদের আপনার সাইট নেভিগেট করতে সুবিধা হয় এবং সার্চ ইঞ্জিন আপনার সাইট সহজে ক্রোল বা ইনডেক্স করতে পারে।

সঠিক সাইট ডিসাইনার জন্য একটি ভালো থিম সিলেক্ট করুন এবং তাতে সর্বোচ ৫-৬টি মেইন মেনু এবং ৬-৮টি সাব মেনু রাখুন।

এবং অবশ্যই সহজ ও সঠিক নেভিগেশন মেনু তৈরি করুন এবং তাতে আপনার সাইটের মেইন পেজ ও ক্যাটাগরি গুলি যুক্ত করুন।

৩. এসএসএল (SSL) সার্টিফিকেট

আপনার সাইটে যদি SSL সার্টিফিকেট না থাকে তাহলে URL বারের বাম দিকে “Not Secure” একটি মেসেজ দেখাবে।

আর যদি আপনার সাইটে SSL সার্টিফিকেট ইনস্টল করা থাকে সেই ক্ষেত্রে সেখানে একটি লক আইকন দেখাবে যা ক্লিক করলে “Connection is secure” দেখাবে।

SSL সার্টিফিকেট আপনার সাইটকে HTTP থেকে HTTPS করে দেয় যা আপনার সাইটের ভিসিটর্স ও কাস্টমারদের বিশেষযোগ্যতা বাড়ায়।

তারা বিশ্বাস পায় যে আপনার সাইটটি সিকিউর বা নিরাপদ এবং সেখানে তাদের বেক্তিগত তথ্যের অপব্যাবহার হবে না।

এখন প্রায় সমস্ত ওয়েব হোস্টিং কোম্পানিই ফ্রিতে SSL প্রদান করে থাকে এছাড়াও আপনি আলাদা ক্রয় করেও আপনার সাইটে ইনস্টল করতে পারেন।

৪. 404 Error বা পেজ নট ফাউন্ড

ধরুন আপনার সাইটের কোনো একটি পেজ ডিলিট হয়ে গেছে বা আপনি কোনো কারণ বসত তা ডিলিট করে দিয়েছেন।

সেই ক্ষেত্রে কেউ যদি সেই পেজেটিতে ভিসিট করে তাহলে সে 404 Errors বা Page not found মেসেজটি দেখতে পাবে।

আপনার সাইটে যদি ১০ থেকে ১৫টি পেজ বা পোস্ট থাকে সেই ক্ষেত্রে বেশি সমস্যা হয় না কিন্তু যদি আপনার সাইটে ২০০ বা ৫০০ পোস্ট থাকে সেই ক্ষেত্রে অনেক 404 Errors আসতে পারে।

ধরুন আপনি একটি পোস্ট তৈরি করলেন এবং সেটি বিভিন্ন সোশ্যাল সাইটে শেয়ার করলেন এবং ব্যাকলিংক ও ইন্টারনাল লিঙ্কিং করলেন।

এখন কোনো কারণ বসত আপনি যদি সেই পেজটি ডিলিট করে দেন যেরকম কোনো তথ্য ভুল বা পোস্টের পারফরমেন্স ভালো না।

তাহলেও আপনার সেই পোস্টে ব্যাকলিংক, ইন্টারনাল লিঙ্কিং এবং সোশ্যাল সাইটে শেয়ার করা লিংক থেকে ট্রাফিক আসবে।

আর যেহেতু আপনি পেজ বা পোস্টটি ডিলিট করে দিয়েছেন তাই 404 Error দেখাবে। আর ভিসিটর্সরা আপনার সাইট তৎক্ষণাৎ ছেড়ে চলে যাবে।

আপনি এই বিষয়গুলি গুগল সার্চ কনসোল থেকে জানতে পারবেন ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।

৫. ব্রোকেন লিংক

আপনি যদি আপনার ওয়েবসাইট থেকে অন্যান্য সাইটকে রেফার করে থাকেন বা অন্য সাইটকে ব্যাকলিংক করে থাকেন।

এবং সেই রেফার করা বা ব্যাকলিংক দেওয়া সাইটটি যদি সেই পোস্ট বা পেজটি ডিলেট করে দেয় বা সাইটটিই বন্ধ হয়ে যায়।

তাহলে আপনার সাইটে ব্রোকেন লিংক তৈরি হওয়া শুরু হবে।

দিন দিন আপনার সাইটের পোস্ট সংখ্যা যত বাড়তে থাকবে আপনার সাইটের ব্রোকেন লিংকের সংখ্যাও বাড়তে থাকে।

আর সাইটে বেশি ব্রোকেন লিংক মানেই হল গুগলের কাছে আপনার সাইট সম্পর্কে ধারণা হয় যে আপনার সাইটটি সবাইকে অকার্যকর বা ভুল কনটেন্ট রেফার করছে।

আর যা আপনার ওয়েবসাইট রেঙ্কিং এর সাথে সাথে আপনার গুগল অ্যাডসেন্সর মধ্যেও বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

এরকম অনেক অনলাইন ব্রোকেন লিংক চেকার টুল আছে যারা আপনাকে সাইটের ব্রোকেন লিংক খুঁজে বার করতে সাহায্য করবে।

অবশ্যই এই টুলগুলি ব্যবহার করুন এবং আপনার সাইটের ব্রোকেন লিংকগুলি খুঁজে বার করে তা ঠিক করুন।টেকনিকাল এসইও এর ক্ষেত্রে ব্রোকেন লিংককে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয়।

৬. মোবাইল ফ্রেন্ডলি ও রেস্পন্সিভ সাইট

আমরা সবাই জানি যে এখন কম্পিউটারের থেকে মানুষ মোবাইল ফোন বেশি ব্যবহার করেন কোনো ওয়েবসাইট ব্যবহার করার জন্য।

তাই অবশ্যই আপনার সাইটটি মোবাইল ফ্রেন্ডলি হতে হবে যাতে দ্রুত ওপেন হয় এবং রেস্পন্সিভ হতে হবে যাতে সমস্ত ডিভাইসে ব্যবহার করা যায়।

এরকম অনেক ওয়ার্ডপ্রেস থিম এবং প্লাগিন্স আছে যাদের সাহায্যে একটি মোবাইল ফ্রেন্ডলি এবং রেস্পন্সিভ সাইট তৈরি করা যায়।

গুগল মোবাইল ইউসারদের দিকে লক্ষ রেখে এই বিষয়টি অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে তাই অবশ্যই আপনার সাইটকে মোবাইল ফ্রেন্ডলি করে তুলুন।

৭. Robots.Txt

Robot.Txt হল আপনার সাইটের ওয়েব রোবট টেক্সট ফাইল যা সার্চ ইঞ্জিন রোবটস বা বটদের ইন্সট্রাকশন দেয় যে আপনার সাইটের কোনো পেজগুলি Crawl করতে হবে আর কোনগুলি না।

আপনি যেকোনো সাইটের Robot.txt চেক করতে পারেন সেই সাইটের URL এর পর /robots.txt যুক্ত করে সার্চ করে।

আর আপনার সাইটে যদি robots.txt ফাইল না থাকে তাহলে তা আপনি তৈরি করে রুট ডিরেক্টরির মধ্যে আপলোড করতে পারেন।

তাতে সার্চ ইঞ্জিন বট বা রোবোটসরা জানাতে পারবেন যে আপনার সাইটের কোন পেজ গুলি Crawl করতে হবে আর কোনগুলি না।

৮. সাইট ম্যাপ (Sitemap)

robots.txt এর মতোই আপনাকে আপনার সাইটের সাইট ম্যাপ তৈরি করতে হয় এবং গুগল সার্চ কনসোলের মধ্যে সাবমিট করতে হয়।

সাইট ম্যাপ XML ল্যাঙ্গুয়েজে হয়ে থাকে যা আপনার সাইটের কনটেন্টকে খুঁজে পেতে, Crawl করতে এবং ইনডেক্স করতে সাহায্য করে।

আপনি সাইট ম্যাপ তৈরি করার জন্য ওয়ার্ডপ্রেস প্লাগিন ব্যবহার করতে পারেন এবং চাইলে robots.txt ফাইলেও তা আপলোড করতে পারেন।

আমাদের শেষ কথা:

তো বন্ধুরা আশা করছি যে আপনারা এখন টেকনিক্যাল এসইও কি এবং এটি আমাদের ওয়েবসাইটের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ বুছতে পেরেছেন।

আমরা যদি একটি সাইটের টেকনিকাল বিষয়গুলির দিকে নজর না রাখি তাহলে সাইটে করা সমস্ত এসইও ফলপ্রসূ হবে না।

আমরা আমাদের সাইটের এসইও বাংলা টিউটোরিয়াল এর বিভিন্ন পার্ট আগেই আলোচনা করছি যা আপনি চাইলে দেখতে পারেন।

আপনাদের যদি এই আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আমায় কমেন্ট করে জানান এবং অন্যদের সাথে শেয়ার করুন।