অন পেজ এসইও কি

অন পেজ এসইও (On page SEO) কি এবং কিভাবে করবেন?

আমরা এসইও কি তা নিয়ে আগেই আলোচনা করেছে। আজকে আমরা শিখবো অন পেজ এসইও কি এবং কিভাবে করতে হয়।

পূর্বে এসইও নিয়ে আমাদের যেই আর্টিকেলটি আছে সেখানে আমরা জেনেছি এসইও এর পুরো অর্থ বা মানে হল সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন।

অর্থাৎ এটি হল এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে কোনো ব্লগ সাইটকে বিভিন্ন উপায়ে সার্চ ইঞ্জিনগুলির অনুকুল করা হয়।

যাতে সেই সাইট ও সাইটের কনটেন্ট গুলি সহজে সার্চ ইঞ্জিন গুলিতে রেঙ্ক করতে পারে বা রেঙ্ক করার সুযোগ বেড়ে যায়।

আবার এসইওর দুটি পার্ট বা অংশ আছে যা হল অন পেজ এবং অফ পেজ এসইও। আর আজকে আমরা অন পেজ এসিওকে নিয়েই বিস্তারিত জানবো।

তো চলুন আর বেশি সময় ব্যয় না করে এবার আমাদের মূল আলোচনায় আসা যাক।

অন পেজ এসইও (On page SEO) কি?

On page SEO হল কোনো ওয়েবসাইট বা ব্লগ সাইটের নির্দিষ্ট কোনো পেজকে অপ্টিমাইজ করে সার্চ ইঞ্জিনের প্রতিকূল করে তোলা যাতে সেই পেজটি সহজে সার্চ ইঞ্জিনগুলিতে রেঙ্ক করে অধিক ট্রাফিক নিয়ে আসতে পারে।

এসইও বা সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশনের গুরুত্বপূর্ণ দুটি পার্ট হল অন পেজ ও অফ পেজ এসইও। আবার যার মধ্যে অন পেজ সব থেকে গুরুত্ব পূর্ণ।

এবং এর ফ্যাক্টর্স বা এলিমেন্টস গুলি একটি ওয়েবসাইট বা ব্লগ সাইটের মধ্যেই থাকে যা খুব সহজেই সাইটের মালিক নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

কিভাবে অন পেজ এসইও করবেন।

অন পেজ এসইও (On page seo) কিভাবে করতে হয়
যেভাবে on page SEO করবেন।

চলুন এবার জেনেনি যে কিভাবে on page SEO করতে হয় বা কিভাবে আমাদের সাইটের নির্দিষ্ট কোনো পেজকে অপ্টিমাইজ করবো।

আমার এই বিষয়টি ভালো ভাবে বোঝার ও শেখার জন্য এটিকে তিনটি অংশে ভাগ করে নেবো।

  • সাইটের লোডিং স্পিড বৃদ্ধি
  • কীওয়ার্ড রিসার্চ
  • এসইও আর্টিকেল রাইটিং

সাইটের লোডিং স্পিড বৃদ্ধি

সবার প্রথমেই আপনাকে ওয়েবসাইট বা ব্লগ সাইটের লোডিং স্পীডের ওপর নজর দিতে হবে যাতে আপনার সাইটটি দ্রুত ওপেন হয়।

সার্চ ইঞ্জিন রেঙ্কিং ফ্যাক্টর্সে সাইটের লোডিং স্পিড অনেক গুরুত্ব বহন করে। তাই অবশ্যই আপনার সাইটের স্পিড অপ্টিমাইজ করুন।

আপনি GTMetrixPingdom এই দুটি সাইট থেকে আপনার ব্লগ সাইট বা ওয়েবসাইটের লোডিং স্পিড সম্পর্কে জানতে পারবেন।

এবং আপনার সাইটের লোডিং স্পিড যদি ধীর হয়ে থাকে তাহলে তা কোনো হচ্ছে এবং কিভাবে তা দ্রুত করবেন সেই বিষয়েও জানতে পারবেন।

অবশ্যই মনে রাখবেন যে একটি স্লো সাইটকে কখনোই কোনো সার্চ ইঞ্জিন পছন্দ করে না তা গুগল হোক বা অন্য কোনো সার্চ ইঞ্জিন।

কিভাবে একটি ওয়ার্ডপ্রেস সাইটের লোডিং স্পিড বৃদ্ধি করবেন তার ওপর আমাদের একটি আর্টিকেল আছে যা আপনি পড়তে পারেন।

কীওয়ার্ড রিসার্চ

কীওয়ার্ড রিসার্চ হল সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাজেশনের ক্ষেত্রে সর্ব প্রথম এবং সব থেকে গুরুত্ব পূর্ণ বিষয় যা অন পেজ এসইওর মধ্যে পরে।

আজও অন পেজ এসইও ইম্প্রোভ করার ক্ষেত্রে যেকোনও রকমের সাইটের জন্য কীওয়ার্ড রিসার্চ অনেক বড় ভূমিকা পালন করে থাকে।

তাই সঠিক ভাবে কীওয়ার্ড রিসার্চ করে ব্লগ পোস্টের জন্য টার্গেটেড বা প্রাইমারি কীওয়ার্ড ও সেকেন্ডারি কীওয়ার্ড নির্বাচন করতে হবে।

এবং তা ব্লগ পোস্টের মধ্যে নিয়ম অনুসারে বা ন্যাচারাল ভাবে প্রয়োগ করতে হবে যা আমরা পরের পয়েন্টে বিস্তারিত জানবো।

কীওয়ার্ড রিসার্চ কি এবং কিভাবে করতে হয় সেই বিষয়ে আমরা আগেই আলোচনা করেছে যা আপনি চাইলে দেখতে পারেন।

এসইও আর্টিকেল রাইটিং

এই বার আমরা অন পেজ এসইওর প্রধান বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি জানবো যা আমাদের আর্টিকেল লেখার সময় করতে হবে।

১. ইউনিক ও হাই কোয়ালিটি কনটেন্ট

“কনটেন্ট ইজ কিং” আশা করা এই কথাটি অবশ্যই শুনেছেন। আপনার কনটেন্ট অবশ্যই উন্নত মানের ও ইউনিক হতে হবে।

ইউনিক মানে আপনার কনটেন্ট কপি হলে চলবে না, আপনি যদি কনটেন্ট কপি করে লেখেন তাহলে তা কখনোই রেঙ্ক করবে না।

ইউনিক বা ডুপ্লিকেট কনটেন্ট চেক করার এরকম বিভিন্ন অনলাইন টুল আছে যাদের সাহায্যে আপনি সহজেই তা চেক করতে পারবেন।

উন্নত মানের বা হাই কোয়ালিটি কনটেন্ট বলতে যাতে ভিসিটর্সরা কনটেন্ট পরে সন্তুষ্ট হয় বা তাদের উদেশ্য পূরণ হয়।

তারা যাতে বুছতে পারে যিনি এই আর্টিকেল লিখেছেন তার এই বিষয়ে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা আছে। তাই সে যদি ওই আর্টিকেল পরে তাহলে অবশ্যই সেখান থেকে কিছু উপকার পাবে।

তার সাথে চেষ্টা করুন বেশি শব্দের ব্যবহার করে আর্টিকেল লেখার এতে সার্চ ইঞ্জিন বট গুলি বুছতে পারে যে আপনার আর্টিকেলের মধ্যে পর্যাপ্ত তথ্য আছে।

২. পোস্ট টাইটেল এর মধ্যে কীওয়ার্ড ব্যবহার

চেষ্টা করুন আপনার ব্লগ পোস্টের টাইটেল ছোট কিন্তু নির্দিষ্ট রাখার এবং টাইটেলের মধ্যে অবশ্যই মেইন ও মডিফাইড কীওয়ার্ড ব্যবহার করুন।

যেরকম ধরুন “Make money online” মেইন কীওয়ার্ড এবং এর মধ্যে আমি “How to” যুক্ত করতে পারি যা হল মডিফাইড কীওয়ার্ড।

এরকম ভাবেই ব্লগ পোস্টের টাইটেলে কীওয়ার্ড ব্যবহার করা শুরু করুন।

৩. হেডিং ট্যাগ এর সঠিক ব্যবহার

HTML হেডিং ট্যাগ সাধারণত ছয় রকমের হয়ে থাকে যাদের H1, H2, H3, H4, H5, এবং H6 হিসাবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে।

এদের ব্লগ পোস্টে ব্যবহারের সময় কিছু নিয়ম আছে যা অনুসরণ করে চলতে হয়। যেরকম একটি ব্লগ পোস্টে একটিই H1 ট্যাগ থাকবে।

যা যেকোনো পোস্টের টাইটেল হয়ে থাকে। আর অন্য দিকে আপনি অন্যান্য ট্যাগগুলি একাধিকবার ব্যবহার করতে পারেন।

তবে অবশ্যই মনে রাখবেন কোনো H3 ট্যাগের হেডিং-এর সাব হেডিং হিসাবে H2 ট্যাগকে ব্যবহার করলে চলবে না বা করা উচিত না।

৪. ছোট প্যারাগ্রাফস

আপনার ব্লগ পোস্ট আর্টিকেলের প্যারাগ্রাফ গুলি ছোট রাখুন এতে ভিসিটর্স বা রিডার্সদের পড়তে সুবিধা হয় ও মনোযোগ পায়।

আপনি যদি প্যারাগ্রাফ বড় রাখেন সেই ক্ষেত্রে রিডার্সদের আর্টিকেল পড়তে অসুবিধা হতে পারে যার ফলে তার আপনার সাইট ত্যাগ করবে।

এবং এর ফলে আপনার সাইটের বাউন্স রেট বেড়ে যাবে যা আপনার সাইটের এসইওর জন্য কখনোই ভালো না।

৫. কীওয়ার্ড ডেন্সিটি

আর্টিকেলে কীওয়ার্ড ব্যবহার করার ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে কীওয়ার্ড ডেন্সিটি বা ঘনত্ব এর বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।

প্রয়োজনের বেশি কীওয়ার্ড ব্যবহার করলে হবে না। তাই চেষ্টা করুন ০.৫-০.৮ শতাংশের মধ্যে কীওয়ার্ড ব্যবহার করার।

যেমন একটি ১০০০ ওয়ার্ডের পোস্টকে ১০০ দিয়ে ভাগ করে ০.৫ দিয়ে গুন্ করলে আমরা সঠিক কীওয়ার্ড সংখ্যা পেয়ে যাবো যা হল ৫।

অতিরিক্ত কীওয়ার্ড স্টাফিং যেকোনো সার্চ ইঞ্জিন এলগরিদমের বিপক্ষে তাই কখনোই এরকম করবেন না।

এতে আপনার ব্লগ পোস্টটি প্রথম দিকে রেঙ্ক করলেও পরে তা পেনালাইজ করে দেওয়া হবে এবং কোনো ভিসিটর্স আসবে না।

৬. প্রথম এবং শেষ প্যারাগ্রাফে কীওয়ার্ড ব্যবহার

কীওয়ার্ড রিসার্চ দ্বারা প্রাপ্ত আপনার মেইন বা ফোকাস কীওয়ার্ড অবশ্যই প্রথম ও শেষ প্যারাগ্রাফের মধ্যে ব্যবহার করুন।

৭. সাব হেডিং এর মধ্যে কীওয়ার্ড ব্যবহার

আপনার ব্লগ পোস্টের মধ্যে যদি এক বা একাধিক সাব হেডিং থেকে থাকে তাহলে তার মধ্যে অবশ্যই মেইন বা প্রাইমারি কীওয়ার্ড গুলি ব্যবহার করুন।

৮. ইন্টারনাল ও এক্সটার্নাল লিংক যুক্ত করুন

ইন্টারনাল লিংক মানে যেই বিষয় বা বিভাগের ওপর আর্টিকেল লিখছেন তারই মধ্যে আপনার সাইটে যদি অন্য আর্টিকেল থাকে।

সেই সমস্ত আর্টিকেলের লিংক ওই ব্লগ পোস্টের মধ্যে যুক্ত করা। যাতে রিডার্সরা অন্যান্য আর্টিকেল গুলিও পড়তে পারে।

যেরকম ধরুন আমি একটি আর্টিকেল তৈরি করছি “ইউটিউব থেকে টাক ইনকাম” এই বার আমার সাইটে যদি অন্য একটি আর্টিকেল থাকে।

যেমন ধরুন “ইউটিউব ভিডিও ভিউস বাড়ানো” নিয়ে তাহলে আমি এই আর্টিকেলের লিংকটি যেই আর্টিকেলটি এখন লিখছি তার সাথে যুক্ত করবো।

সেরকম ভাবেই এক্সটার্নাল লিংক হল আপনার পোস্টের মধ্যে অন্য কোনো সাইটের লিংক যুক্ত করা যেরকম কোনো রিসোর্স সাইটের লিংক।

তবে এক্সটার্নাল লিংক হিসাবে সেই সমস্ত সাইটের লিংকই ব্যবহার বা যুক্ত করবেন যাদের ডোমেইন অথরিটি ভালো ও বেশি।

৯. ইমেজ অল্ট ট্যাগের মধ্যে কীওয়ার্ড ব্যবহার

আপনার ব্লগ পোস্টের প্রথম ইমেজের মধ্যে মেইন বা ফোকাস কীওয়ার্ড ব্যবহার করুন এবং আরো যদি অন্যান্য ইমেজ থেকে থাকে।

তাহলে সেই সমস্ত ইমেজ গুলির অল্ট ট্যাগের মধ্যে সেকেন্ডারি কীওয়ার্ড ব্যবহার করুন।

১০. পোস্ট লিংক বা স্লাগ

পোস্ট লিংককেই স্লাগ (Slug) বলা হয় এবং আপনাকে স্লাগের মধ্যে অবশ্যই আপনার মেইন কীওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে।

তার সাথে পোস্ট লিংক বা স্লাগটি অবশ্যই ছোট ও নির্দিষ্ট রাখুন।

১১. মেটা ডেসক্রিপশন

আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল মেটা ডেসক্রিপশন। যেটিকে আপনাকে অবশ্যই আকর্ষণীয় ও কম শব্দের মধ্যে তৈরি করতে হবে।

কারণ কোন সার্চ ইঞ্জিনে আমরা যখন কিছু সার্চ করি তখন যে রেজাল্ট গুলি আসে আমরা তাদের শুধু টাইটেল, পোস্ট লিংক এবং মেটা ডেসক্রিপশন দেখতে পাই।

আর এই মেটা ডেসক্রিপশন দেখেই আমরা বুছতে পারি যে ওই নির্দিষ্ট লিংক বা সার্চ রেজাল্টটি থেকে আমরা কি জানতে পারবো।

তার সাথে আপনার মেইন বা প্রাইমারি কীওয়ার্ড এবং সেকেন্ডারি কীওয়ার্ড অবশ্যই মেটা ডেসক্রিপশনের মধ্যে ব্যবহার করুন।

১২. সোশ্যাল শেয়ার বাটন

সবার শেষে আপনার প্রতিটি ব্লগ পোস্টের মধ্যে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া সাইটের শেয়ার বাটন গুলি যুক্ত রাখুন।

ফলে কোনো রিডায়ার্সের যদি আপনার আর্টিকেল ভালো লেগে থাকে তাহলে সে অবশ্যই তা অন্যদের সাথে শেয়ার করবে।

এতে আপনার সাইটে বা ওই নির্দিষ্ট ব্লগ পোস্টের ভিউস বাড়বে।

আমাদের শেষ কথা:

আপনি যদি একজন ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহারকারী হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই Yoast SEO প্লাগিনটি ব্যবহার করুন এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

আপনি যদি এই প্লাগিনটি ব্যবহার করেন তাহলে এই পোস্টের মধ্যে বলা তিন নম্বর পয়েন্ট “এসইও কনটেন্ট রাইটিং” এর সমস্ত জিনিসগুলি এখান থেকে করতে পারবেন।

আর আপনি যদি ওয়ার্ডপ্রেস ব্যতীত অন্য কোনো প্লাটফর্ম ব্যবহার করে থাকেন সেই ক্ষেত্রে উক্ত বিষয়গুলি অবশ্যই অনুসরণ করুন।

তো বন্ধুরা আজকে আমরা জানলাম যে অন পেজ এসইও কি এবং কিভাবে করতে হয়

আপনাদের যদি এই আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই অন্যদের সাথে শেয়ার করুন এবং আমায় কমেন্ট করে জানান।